চুয়াডাঙ্গা গোস্টবিহারে আদম ব্যাপারী আলীর খপ্পরে পড়ে স্বামী-সন্তান হারিয়ে দিশেহারা স্ত্রী পারভীনা
বেগমপুর প্রতিনিধি: ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রায় একবছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর গোস্টবিহার গ্রামের দিনমজুর ইসমাইল হোসেন। স্ত্রী পারভীনা যখন স্বামী শোকে কাতর ঠিক তখনি অর্থাভাবে চিকিৎসা দিতে না পারায় কোলের ওপরই মারা গেছে ১০ মাসের শিশু সন্তান নুসরাত। ফলে একদিকে স্বামীর সন্ধান না পাওয়া অন্যদিকে কোলের সন্তান হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নিখোঁজ ইসমাইলের স্ত্রী পারভীনা বেগম। বর্তমানে শোকার্ত পারভীনার দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। সন্তানকে হারিয়ে স্বামীকে ফেরত পাবার আশায় তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগ করেছেন পারভীনা বেগম।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গোস্টবিহার গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন (৪০) দিনমজুর করে সংসার চালিয়ে আসছিলো। অভাব অনটনের সংসারের চাকা সচল করতে মালয়েশিয়ায় যাবার পরামর্শ দেয় গড়াইটুপি গ্রামের মৃত শহীদের ছেলে আদম ব্যাপারী আলী আহম্মদ। শহীদের মিষ্টি কথায় মন গলে ইসমাইলের। ২০১৫ সালে জমি বন্দক, এনজিও ঋণ, গ্রাম্য সুদের ওপর টাকা এবং আতœীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধারকর্জ করে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা তুলে দেয় আদমব্যাপারী আলীর ছেলে বাবু’র হাতে। পিতা ঢাকাতে থাকার সুবাদে আলী স্থানীয় পর্যায়ে বিদেশে নেবার কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেন ছেলে বাবুকে দিয়ে। ইসমাইলের স্ত্রী পারভীনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, দুবছর আগে স্বামী ইসমাইলকে মালয়েশিয়াতে নিয়ে যায় আদম ব্যাপারী আলী ও তার ছেলে বাবু। যাওয়ার পর ৫মাস কোনো কাজ মেলেনা তার। সেখানে খেয়ে না খেয়ে বন্দি অবস্থায় দিন কাটে তার। স্বামীর অবস্থান জানতে আদম ব্যাপারী আলীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সে মোবাইল বন্ধ করে রাখে। পরিশেষে পারভীনা জানতে পারে কাজের কথা বলে ইসমাইলকে মালয়েশিয়াতে নিয়ে গিয়েছিলো সে কাজতো পায়নি বরং অবৈধ হয়ে ফেরারি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে ধারকর্জর টাকার সুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি পাওনাদাররা বাড়িতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে। পাওনাদারদের টাকা দিতে না পেরে পারভীনা যখন দিশেহারা ঠিক তখনি কোলের ১০ মাসের কন্যাসন্তান নুসরাতের হার্টে দেখা দেয় সমস্যা। অবশিষ্ট যা ছিলো বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য মেয়েকে ঢাকাতে নিয়ে যায় সে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ঢাকা হার্ট ফাউ-েশন হাসপাতালে গত ৩ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। একদিকে স্বামীর সন্ধান না পাওয়া, অপরদিকে কোলের শিশু সন্তান হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে পারভীনা বেগম। স্বামী সন্তান হারানোর শোকে পারভীনার কণ্ঠে গুমড়িয়ে কান্নার যেমন নেই কোনো শব্দ তেমনি শুকিয়ে গেছে চোখের জল। একদিকে দারিদ্রতা অপর দিকে পাওনাদারদের ভিড়, তার ওপর স্বামীর সন্ধান না পাওয়া পারভীনা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কোনো উপায়ান্ত না পেয়ে গত ১৫ নভেম্বর স্বামীর সন্ধান পেতে আদম ব্যাপারী আলী’র বিরুদ্ধে তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছেন পারভীনা। তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, একদিকে কোলের সন্তান হারানোর যন্ত্রণা অপর দিকে স্বামীর সন্ধান না পাওয়া পারভীনাকে শান্তনা দেবার ভাষা আমার জানা নেই। নিখোঁজ ইসমাইলকে মালয়েশিয়া থেকে কিভাবে ফেরত আনা যায় তার জন্য আদম ব্যাপারী আলীকেই সমাধান দিতে হবে। আদম ব্যাপারী আলী বলেন, আমি বৈধভাবে মালয়েশিয়াতে নিয়ে গিয়েছি। কাজ পেতে দেরি হওয়ায় সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। এতে আমার দোষ কিসের।