ভারতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো দাদাগিরি’র দৌলতে তিন বছর পর দেশে ফিরলো যুবক মামুন
বখতিয়ার হোসেন বকুল: ভারতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো দাদাগিরির দৌলতে ৩ বছর পর আপন ঠিকনায় ফিরলেন মানসিক ভারসাম্যহীন বাংলাদেশী যুবক রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার চামটা গ্রামের মামুনুর রশিদ। দির্ঘ ৩ বছর পর নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরে তার চোখে-মুখে ছিলো বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস। ঈদের প্রথম চাঁদ দেখার মত খুশিতে মাতোয়ারা ওই মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক মামুন। তবে সে বর্তমানে সম্পুর্নরূপে সুস্থ।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার চামটা গ্রামের কৃষক আব্দুল করিমের বড় ছেলে এক সন্তানের জনক মামুনুর রশিদ (৩২) প্রায় বছর চারেক আগে আকস্মিক মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ৩ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। ঘুরতে ঘুরতে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়েন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। অবৈধ পথে ভারতে অনুপ্রবেশের অপরাধে বিএসএফ তাকে বেদম প্রহার করে। পরে বিএসএফ তাকে তুলে দেয় চাপড়া থানা পুলিশের হাতে। অভিযোগ বিএসএফ ও পুলিশ তাঁকে বেধড়ক মারধর করেছিলো। ভেঙ্গে যায় তার বাম পা। পরে চাপড়া থানার পুলিশ বুঝতে পারে ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। পুলিশ জেলা সমাজকল্যাণ দফতর ও কৃষ্ণনগর মহকুমা শাসকের মারফত নকশিপাড়ার একটি বেসরকারি হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। নকশিপাড়ার ওই হোমে পৌছানোর পরেই চিকিৎসা শুরু হয় মামুনের। প্লাস্টার করিয়ে ভাঙ্গা পায়ের চিকিৎসা শুরু হয় তার। অসুস্থ্য থাকাকালীন নিজের নাম পরিচয় কিছুই বলতে পারছিলেন না। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ৪ মাস চিকিৎসার পর সুস্থ্য হয়ে ওঠে যুবক মামুন। হোমে থাকাকালীন ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল রিয়েলিটি শো করতে আসে ওই নকশিপাড়া হোমে। রিয়েলিটি শো দাদাগিরিতে দেখানো হয় বাংলাদেশী যুবক মামুনকে। ওই রিয়েলিটি শো মামুনের বাড়ির লোকজনও দেখছিলেন। এ ভাবেই খোঁজ মেলে মামুনের। রিয়েলিটি শো দাদাগিরিতে বিষয়টি দেখানোর পর ভারতের কলকাতার দৈনিক আনন্দ বাজার, দৈনিক বর্তমান এবং হিন্দুস্থান টাইম্স নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় মামুনের নির্যাতনের কাহিনী। এর কিছুদিন পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পরিবারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় উদ্যোগ। ভাগ্নে মামুনকে আনতে ভারতে ছুটে যান মামুনের মামা স্কুল শিক্ষক নুরুল ইসলাম। মামাকে দেখে চেখের পানি ধরে রাখতে পারেনি মামুন। খুশির আবেগে ভাসতে শুরু করেন তিনি। সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত রোববার বিকেলে দামুড়হুদার দর্শনা গেদে সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় পতাকা বৈঠক। পতাকা বৈঠক শেষে বিএসএফ মামুনকে তুলে দেয় বিজিবির হাতে। পরে রাত ৯টার দিকে নেয়া হয় দামুড়হুদা মডেল থানায়। থানায় নেয়ার পর ওসি আকরাম হোসেনের নির্দেশে পুলিশ পিতা আব্দুল করিম ও মামা নুরুল ইসলামের হাতে তুলে দেয়া হয় মামুনকে। ওই রাতেই নিজ বাড়ি রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয় তারা। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নিরাপদেই বাড়িতে পৌছায় বলে মোবাইলফোনে জানিয়েছেন মামুনের পিতা আব্দুল করিম। এ দিকে দীর্ঘদিন পর মামুনকে ফিরে পেয়ে পরিবারের লোকজনের মধ্যে বয়ে যায় খুশির বন্যা। বাবা-মা, স্ত্রী সস্তানসহ স্বজনদের চোখে মুখে দেখা গিয়েছে হাসির ঝিলিক। মামুনের মামা স্কুল শিক্ষক নুরুল ইসলাম দাদাগিরির উপস্থাপক ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী ও নকশিপাড়া হোমের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।