চুয়াডাঙ্গায় বার্ষিক বিয়ের অর্ধেকেরও বেশি বিচ্ছেদ

জেলা রেজিস্ট্রারের দস্তাবেজে কাজিদের দেয়া তথ্য ওঠে বছরে একবার

কামরুজ্জামান বেল্টু: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় বছরে যতোটা বিয়ের বন্ধন, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে দাম্পত্য বিচ্ছেদ? গতবছরের বিয়ে ও তালাকের রেজিস্ট্রারের সংখ্যা এটাই বলছে। তবে জেলার অন্য উপজেলাগুলোর হিসেব বিয়ের তুলনায় তালাকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। বিচ্ছেদের এ সংখ্যা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? এমন প্রশ্ন তুলে কেউ কেউ প্রশ্ন বলতেই পারেন, আমাদের সমাজেও লেগেছে পশ্চিমা ভাঙাগড়ার হাওয়া। চুয়াডাঙ্গা জেলায় গতবছর মোট বিয়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭শ ৭৩টি আর বিচ্ছেদ হয়েছে ৩ হাজার ৭শ ৭৩টি। জেলা রেজিস্ট্রারের দস্তাবেজেই এ পরিসংখ্যান লিপিবদ্ধ রয়েছে।
প্রতিবছর শীত মৌসুমেই মূলত বিয়ের ধুম পড়ে। সে হিসেবে এবারের বিয়ের ভরা মরসুম শুরু হওয়ার আগে গত বছরের বিয়ে আর বিচ্ছেদের পরিসংখ্যান নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই অনেকেরই মাঝে। প্রতিবছর কেনো কাজি ও ওই কাজির প্রতিনিধি মোট কতোটা বিয়ে সম্পাদন করলেন, কতোটা তালাক হলো তার হিসেব জানুয়ারি মাসে জেলা রেজিস্ট্রারের মূল খাতায় তোলা হয়। গতবছর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় বিয়ে ও তালাকের যে সংখ্যা দস্তাবেজে উঠে এসেছে তা চমকে ওঠার মতোই। গতবছর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় মোট বিয়ে সম্পাদন হয় ২ হাজার ৪৮টি। আর তালাক তথা বিচ্ছেদ হয়েছে ২ হাজার ১শটি। দামুড়হুদা উপজেলায় গতবছর বিয়ে হয় ১ হাজার ৩শ ৩টি ও বিচ্ছেদ হয়েছে ৬শ ৯৩টি। আলমডাঙ্গা উপজেলায় গতবছর বিয়ের সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ৮শ ৩১টি। বিচ্ছেদ হয়েছে ৬শ ৫৪টি। জীবননগরে বিয়ের সংখ্যা ছিলো ৫শ ৯১ ও বিচ্ছেদের সংখ্যা ছিলো ৩শ ২৬টি। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরে বিচ্ছেদের সংখ্যা বেশি কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক কাজি বলেছেন, মামলাসহ নানা কারণেই অন্য উপজেলার তালাকনামাও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কাজি দিয়ে সম্পাদন করানোর কারণে সংখ্যাটা বেড়ে গেছে।
বিয়ে পড়াতে ও তালাকনাম বা বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কাজির আয় আছে। সে হিসেবে সমাজে কাজিরা শাকের করাত বটে। আসতেও কাটে, যাইতেও কাটে। তো ওদের আয় কেমন? বিস্তারিত জানতে গেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের প্রধান সহকারী মরিদুল ইসলাম বলেছেন, বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে কে ক’টাকার দেনমহর করবেন তা পাত্র পাত্রি বা তাদের অভিভাবকদের বিষয়। কেউ এক টাকা দেনমহরেও বিয়ে করতে এবং ওতেই কনে রাজি হলে হতেও পারেন। কাজি বিয়ে পড়াবেন। এক্ষেত্রে সর্বনি¤œ ফি পাবেন কাজি একশ টাকা। আর দেনমহর হাজার প্রতি সাড়ে ১২টাকা করে কাজিরা পেয়ে থাকেন। তবে দেনমহর ৪ লাখের যতো বেশিই হোক ওই ৫ হাজার ১শ টাকার বেশি কাজি নিতে পারবেন না। চুয়াডাঙ্গা জেলায় বর্তমানে কাজির সংখ্যা কম নয়। সদর উপজেলায় ১৮ জন, দামুড়হুদায় ১৪ জন, আলমডাঙ্গায় ২২ জন, জীবননগরে ৭জন অনুমোদিত কাজি রয়েছেন। প্রত্যেক কাজির জন্য নির্ধারিত এলাকা রয়েছে। একজন অন্যের এলাকায় বিয়ে পড়াতে যেতে পারেন না। তবে যে এলাকারই বর কনে হোক তারা ওই কাজির অফিসে পৌছে বিয়ে করলে সে ক্ষেত্রে এলাকার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি শিথিল।
চুয়াডাঙ্গায় গতবছর যতোটা বিয়ে তার অর্ধেকের বেশি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। সব বিচ্ছেদই নতুন দম্পতির নয়। নতুন পুরাতন মিলেই বিচ্ছেদ। কিন্তু কেনো? এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি। তবে বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে কাজিদের বার্ষিক হিসেব জেলা রেজিস্ট্রারের দস্তাবেজে তোলার বিষয়টিকে অনেক কাজিই সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন। বাল্যবিয়ে সম্পাদন করলেও তাদের অনেকেই রেজিস্ট্রারে তা না তুলে কাগজে লিখে রাখেন। উচ্চবাচ্য না হলে পরবর্তিতে তা তোলেন। আবার এমনও আছে অনেক বিয়ে রেজিস্ট্রারে তোলেনও না। সে কারণে প্রতি বছরে নয়, কাজিদের বিয়ে ও তালাকের পরিসংখ্যান নামধামসহ প্রতিমাসে জেলা রেজিস্টারের রেকর্ডভূক্ত করার বাধ্যবাধকতা করা দরকার বলেও মন্তব্য অনেকের।