গচ্চা যাচ্ছে হরিণাকুণ্ডু পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাড়ে ২৭ লাখ টাকা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের একটি সেচখাল দীর্ঘদিন ধরেই পরিত্যক্ত। বলা যায় বর্ষা মরসুমেও সেই খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। অথচ সেই মরা সেচখালের অফটেক রেগুলেটর গেট নির্মাণে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা সরকারি অর্থ পকেটস্থ করেছেন। ইতোমধ্যে গেটটি নির্মাণ না করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। এলাকাবাসীও মরা সেচখালে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে গেট নির্মাণের বিরোধী। তাদের ভাষ্য হরিণাকু-ু উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের টি-৬/এস-৫ এ সেচখালটি মরা। খননের পর থেকেই ওই খালে পানি নেই। তারপরও সেখানে গেট নির্মাণ করে সরকারি অর্থ তছরুপ করা হচ্ছে। এ টাকার গেট না করে সেচখালের অন্য কাজে লাগালে কৃষকরা উপকৃত হতেন। হরিণাকু-ুর চাঁদপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ অভিযোগ করেন, এ খালটি চাঁদপুর থেকে যাদবপুর গ্রামের খালাশিসেড পর্যন্ত তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য। গত বছর দেড় কিলোমিটার খনন করা হলেও সেখানে পানি ওঠেনি। তারপরও দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি স্থানে আউটলেট বসিয়ে টাকা তছরুপ করা হয়েছে। এলাকার কৃষক মোবারক হোসেন জানান, আউটলেট পয়েন্ট দিয়ে কৃষকের ক্ষেতে পানি সরবরাহ করা হয়। অথচ উক্ত সেচখালে কোনো পানিই নেই। অপ্রয়োজনীয়ভাবে আউটলেট বসানোর ফলে এলাকার কৃষকের কোনো উপকারেই আসেনি বা কখনোই আসবে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হরিণাকু-ু উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের টি-৬/এস-৫ এ সেচখালে নির্মিত গেটটির ডিজাইন ও এস্টিমেট কুষ্টিয়া জেলার কোনো একটি খালের। সেই ডিজাইন ব্যবহার করে গেটটি নির্মাণ করলে খালের পাড় থেকে অনেক নিচে গেটটি নির্মিত হবে। যেনতেনভাবে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ করতেই ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে মাগুরায় কর্মরত আব্দুল লতিফ, সহকারী প্রকৌশলী বর্তমান অবসর প্রাপ্ত মতিয়ার রহমান ও বর্তমানে বাগেরহাটে কর্মরত ঝিনাইদহের সাবেক শাখা কর্মকর্তা জাকারিয়া ফেরদৌস এ ভুয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন।
অভিযোগ উঠেছে, এ তিন কর্মকর্তা চলতি বছরের ১৫ মে তারিখে ঠিকাদারকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে অর্ধেক টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে ঝিনাইদহ ছেড়েছেন। কাজটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রামের পাচলাইশ এলাকার মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রদার্সা প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিন দেখা গেছে, মরাখালের সংযোগ স্থানে মাটি খুড়ে কাজ শুরু করেছেন। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দীন কাজের উদ্বোধনও করেছেন। ২০১৮ সালের ২২ জুনের মধ্যে কাজটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিবিএ সভাপতি খুরশিদ শরীফ জানান, ওই খালে পানি না ওঠার কারণে হরিণাকু-ুর যাদবপুর স্থানে একটি পাম্প বসিয়ে নদী থেকে পানি তুলে টি-৬/এস-৫ এ সেচখালে পানি দেয়ার পরিকল্পনা ও ম্যাপ করা আছে। অথচ এ মরা খালে কীভাবে ভিন্ন জেলার ডিজাইন কাজে লাগিয়ে গেট নির্মাণ হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। এ নিয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দীন জানান, আমি নতুন যোগাদান করেছি। তাই বিষয়টি নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই। উল্লেখ্য ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে মাগুরায় কর্মরত আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে দুদকের গণশুনানীতে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ ওঠে। তিনি পছন্দের বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে ২৫% ঘুষ নিয়ে কাজ দেন। এ ভাবে তিনি সেচখাল খনন ও মেরামত, ব্রিজ কালভার্ট এবং আউটলেট নির্মাণে ১৫ কোটি টাকা ব্যায় করেন। এ নিয়ে দুদকের গণশুনানীতে কথা ওঠে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে মাগুরায় কর্মরত আব্দুল লতিফের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন সিরিভ করেননি।