রাত গভীরে বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে ধরা-ছাড়া ও পকেট ভর্তির অভিযোগ

দর্শনাসহ আশপাশ এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযানের নামে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোষাকে ওরা কারা ?

দর্শনা অফিস: দর্শনা তথা আশপাশ এলাকা মাদকের ছড়াছড়িতে পরিণত দীর্ঘদিন ধরে। যতোই দিন যাচ্ছে মাদকদ্রব্য বিকিকিনি ততোই বাড়ছে। একাধিকবার মাদকমুক্ত এলাকা গঠনের উদ্দ্যোগ গেছে ভেস্তে। দর্শনাসহ আশপাশ এলাকায় মাদককারবারী যেমন গুণে শেষ করা মুশকিল, তেমনি রয়েছে অগণিত মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষে বসে নেই পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা। এ বাহিনীগুলো অবিরাম অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানে চুনোপুটিরা ধরা পরলেও রাঘব বোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যে কারণে কোনোভাবে নির্মূল হচ্ছে না মাদকদ্রব্য। চুয়াডাঙ্গাকে মাদকমুক্ত করণের লক্ষে এক প্রকার জেহাদ ঘোষণা করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ, ৬ বর্ডার গার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ঝিনাইদহ র‌্যাব ক্যাম্পের কর্মকর্তারা। তার পরেও থেমে নেই মাদকদ্রব্য বিকিকিনি। সবকিছুই চলছে পুরোনো গতিতে। থেকে থেকে কৌশল পাল্টাচ্ছে মাদককারবারীরা। তবে কি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতো আন্তরিক নয় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ? এ প্রশ্ন অনেকেরই। খানেকটা হঠাৎ করেই মাদককারবারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে আতঙ্ক। এ আতঙ্ক ধরা-ছাড়ার আতঙ্ক।
অভিযোগে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে গভীর রাতে সাদাপোষাকধারী একটি চক্র মাঠে নামছে। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হানা দিচ্ছে মাদককারবারীদের বাড়ি বাড়ি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত মাদককারবারীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ঘন্টা খানেকের মাথায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে ছেড়ে দেয়ার কথাও জানিয়েছে কেউ কেউ। পুলিশের পরিচয়ে ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাদাপোষাকধারীরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়েই বাড়ি থেকে তুলে নিচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের বলা হচ্ছে যোগাযোগের জন্য। দরকষাকষির এক পর্যায়ে দেয়া হচ্ছে ছেড়ে। সাদাপোষাকধারী পুলিশ পরিচয় দানকারীদের কেউ কেউ দামুড়হুদা থানার একাধিক এসআই এবং এএসআই’র নামের সাথে নাম মিলিয়ে পরিচয় দিলেও তার কোনো সত্যতা মেলেনি। অভিযোগ উঠেছে, গত শুক্রবার রাত দুইটার দিকে নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেয়া সাদাপোষাকধারী ওই চক্র দর্শনা হল্টস্টেশনপাড়ার নুরু ও ঈশ্বরচন্দ্রপুরের ফকোকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ১ ঘন্টার মাথায় দর্শনা বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে দেয়। ওই রাতে আরো কয়েকজন মাদককারবারীর বাড়িতে অভিযানের নামে হানা দিলেও হয়নি তেমন সুফল। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েছে অনেকেই। কয়েকদিন আগে হল্টস্টেশনপাড়ার বগা ও মুন্নাকে ধরেও এ ধরণের অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে রাত গভীর হলেই মাদককারবারীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করে বলেছে, সাদাপোষাকধারী ভূয়া পুলিশ নয়, প্রকৃত পুলিশ এ ধরণের অভিযান শুরু করলে হয়তো কিছুটা হলেও সুফল হতে পারে। সেক্ষেত্রে মাদককারবারীদের করতে হবে গ্রেফতার। গ্রেফতার করে অর্থবাণিজ্যের মাধ্যমে ছেড়ে দিলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে মাদককারবারীরা। তাই প্রকৃত পুলিশ সদস্যদের মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে আতঙ্কিত হয়ে উঠুক মাদককারবারীরা। সাদা পোষাকে পুলিশ পরিচয়দানকারীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার কলিমউল্লাহ ও দামুড়হুদা থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন বলেছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গায়েন বলেছেন, দর্শনা পুলিশ সাদা পোষাকে কোনো প্রকার অভিযান চালায় না।