নবান্ন উৎসবে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ সারাদেশে নানা আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার: ‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয় হয়তো শঙ্খচিল শালিখের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে…’ (জীবনানন্দ দাশ)। বাংলার আদিগন্ত মাঠ জুড়ে এখন হলুদে-সবুজে একাকার। নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি। সোনালি ধানের প্রাচুর্য। আনন্দধারায় ভাসছে কৃষকের মন-প্রাণ। বাড়ির উঠোন ভরে উঠবে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে। এসেছে অগ্রহায়ণ। হিম হিম হেমন্ত দিন। হেমন্তের ঘ্রাণ নবান্ন উৎসব ছিলো কাল। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা গ্রামীণ মেলা। এখন আমন ধান কাটার মাহেন্দ্র সময়। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পুরোভাগে থাকা এই নবান্ন উৎসব অনাদিকাল হতে বাঙালির জীবন অধিকার করে আছে। লোককথায় এদিনকে বলা হয়ে থাকে বাৎসরিক মাঙ্গলিক দিন। এ সময় বিবিধ ব্যঞ্জনে অন্নাহার, পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মুখর হয় জনপদ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, পহেলা অগ্রহায়ণ নবান্ন উৎসব পালন উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় হয়ে গেল পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে মেহেরপুর কমিউনিটি সেন্টারে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক খায়রুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শেখ ফরিদ আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহমেদ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহকারি অধ্যাপক সাইদুর রহমান, পৌর সচিব তোফিকুল আলম, প্যানেল মেয়র শাহীনুর রহমান রিটন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাফিনাজ আরা ইরানী, শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু, শ্বাশত চক্রবর্তী নিপ্পন প্রমুখ। পিঠা প্রতিযোগিতায় মেহেরপুর সরকারি কলেজ প্রথম, মহিলা সংস্থা দ্বিতীয় এবং মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ ও পল্লী পিঠাঘর যৌথভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। জেলা প্রশাসক পতœী স্মৃতি রাণী সিনহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পতœী নাদিরা আহমেদ, পৌর মেয়র পতœী আরিফা আক্তার রুশি ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পতœী আফসানা রোজ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজের সার্বিক তত্বাবধানে এবং আবুল হাসনাত দিপু ও ফাতেমা ফারজানা নির্জনার উপস্থাপনায় নবান্নের গ্রাম-বাংলার গান পরিবেশন করেন মোমিনুল ইসলাম, ফৌজিয়া আফরোজ তুলি, আসাদুল ইসলাম খোকন, নির্জনা, সোনিয়া, আদ্রিতা, সামিহা ও সেবানী দত্তসহ শিল্পকলার শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে এম সাইদুর রহমান রচিত গীতিনাট্য পরিবেশন করেন মুহিত ও সুলতানা রাজিয়া টনি। এছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিশু শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করে।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের মুজিবনগর নবান্ন উৎসব ১৪২৪ উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি করেছে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসন। এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে মুজিবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বর থেকে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা/কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীর অংশ গ্রহণে একটি র‌্যালি বের হয়। উপজেলার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়। র‌্যালিটির নেতৃত্ব দেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার। উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর থানা ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। পরে উপজেলা হলরুমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ নবান্ন উৎসব উপলক্ষে শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল এমএন একাডেমী চত্বর থেকে শিশু-কিশোর, যুব ও নারী পুরুষের অংশ গ্রহণে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এ নবান্নের আনন্দ শোভাযাত্রার র‌্যালিতে অংশ নেয় ঝিনাইদহের বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠী, ঝিনাইদহ বহুমুখী বাউল সংঘ, কাঞ্চনপুর নাট্যদল, দুর্জয় শিশু-কিশোর একাডেমী ও ইন্টারন্যাশনাল এমএন একাডেমীর কর্মী, সমর্থক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ। শেষে বাঙালির চির ঐতিহ্য খৈ, মুড়ি, চিড়া, বাতাসা ও সন্দেস খাওয়া হয়। নবান্নের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা করেন বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠীর সভাপতি রাজু আহাম্মেদ মিজান, কাঞ্চনপুর নাট্যদলের সভাপতি তারেক হোসেন পল্লব, বহুমুখী বাউল সংঘের সভাপতি রজব আলী বয়াতি, দুর্জয় শিশু-কিশোর একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ ও রেল আবদুল্লা, হেলাল উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
গাংনী প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুর গাংনীতে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়েছে নবান্ন উৎসব। এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার বিকেলে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ফিরে শেষ হয়। সম্মেলন কক্ষে আলোচনাসভা ও পিঠা পরিবেশন করা হয়। নতুন ধানের রকমারি পিঠা নিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. শফিকুল আলম, গাংনী প্রেসক্লাবের সভাপতি রমজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরজাহান বেগম ও উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারহানা ইয়াছমিন প্রমুখ। আলোচনা শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।