নিম্নমানের কাগজে বিনামূল্যের পাঠ্যবই

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিবছরের মতো এবারও নিম্নমানের কাগজে ছাপানো হচ্ছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। চার রঙের পাঠ্যবই ৮০ গ্রাম শাদা কাগজে ছাপার যেসব শর্ত ছিলো, তা মানছে না অনেকেই। ফলে বইয়ের বেশির ভাগ ছবি ছাপা যেমন অস্পষ্ট, তেমনি ঠিকমতো বাঁধাইও হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ের বই ছাপায় নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করায় বলাকা প্রিন্টার্সের প্রায় ২শ টন, লেটার অ্যান্ড কালারের ২শ টন, লেখন আর্ট প্রেসের ১শ টন, এস আর প্রিন্টার্সের ১শ ১০ টন, প্রিয়াংকার ১শ টন, জুপিটারে ও সীমান্ত দুটি প্রিন্টার্সের আলাদা প্রায় ২শ টন, সাগরিকার প্রায় ২শ ৯০ টন, পিএ প্রিন্টার্স ৫০ টন, পেপার প্রেসের ৫শ ৯০ টনসহ প্রায় ১৫ হাজার টন কাগজ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ছোট ছোট আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাগজ বাতিল হয়েছে।

কাগজ ও বইয়ের মান দেখভালের জন্য এনসিটিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল বিডি লিমিটেড একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, তারা বেশ কয়েকটি প্রেসের কাগজে ত্রুটি পেয়ে বিষয়টি এনসিটিবিকে জানিয়েছেন। কারণ, তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না, এনসিটিবিকে অবহিত করাই তাদের কাজ, সেটি নিয়মিত করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রাথমিকের বইয়ের কাগজ ও ছাপার মান অনেক ক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে বেশ খারাপ হচ্ছে। মাধ্যমিকের বই কিছু প্রেস এমনভাবে বাঁধাই করেছে যে, মেলতে গেলেই সুতা ছিঁড়ে যাচ্ছে। এমনিতে শিশুদের হাতে বই বেশি ছিঁড়ে। নিম্নমানের বাঁধাইয়ের কারণে দ্রুতই বইগুলো পড়ার অযোগ্য হয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কোমলমতি শিশুদের জন্য মানসম্মত বই তৈরি করতে তারা বদ্ধপরিকর। মুদ্রাকরেরা দরপত্রের শর্ত না মানলে নানা রকম ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ তাদের হাতে রয়েছে। আবার নিম্নমানের কাগজে বই দিয়ে থাকলে তা দরপত্রের শর্তের লঙ্ঘন, যেটি কাম্য নয়।

শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, দরপত্র মেনে কাজ করতে হবে এবং না মানা হলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা দরপত্রেই বলা আছে।

নিম্নমানের কাগজে তৈরি বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই সংগ্রহ করে দেখা গেছে, চার রঙের পাঠ্যবই ৮০ গ্রাম শাদা কাগজে ছাপার যে সব শর্ত ছিলো, তা অনেকেই মানেনি। বইয়ের বেশির ভাগ ছবি ঝাপসা, নড়বড়ে বাঁধাই। মুদ্রাকররা বলেন, এবার কাজ নেয়ার পর মিলমালিকরা কাগজের দাম ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছেন। অগ্রিম টাকা দিয়েও সময় মতো ও মানসম্মত কাগজ পাওয়া যায়নি। এর কিছুটা প্রভাব পাঠ্যবইয়ের ওপর পড়েছে। এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণচন্দ্র সাহা বলেন, নিম্নমানের কাগজের ব্যাপারে এবার তারা সর্বোচ্চ সতর্ক আছেন। যেসব বই নিম্নমানের কাগজে ছাপানো হয়েছে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে।

এ দিকে মাধ্যমিকের সুখপাঠ্য বই নিয়ে জটিলতা এখনও কাটেনি। চলতি সপ্তাহে ৬১টি প্রতিষ্ঠানকে ১০২ লটের প্রায় পৌনে দুই কোটি বইয়ের কাজ দেয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে কাজ শুরম্ন করেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৯ নভেম্বর কাজ বুঝে নিবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়ার্ক অর্ডার দেয়ার পর এ সব কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ দিন সময় দিতে হবে। এরপর জরিমানা দিয়ে আরও ২৮দিন পর্যন্ত তারা বই ছাপাতে পারবে। অর্থাৎ ওয়ার্ক অর্ডার দেয়ার ৫৫ দিন শেষ হবে জানুয়ারির ১৬ তারিখ। এ বছর সুখ্যপাঠ্যের বই নিয়ে ১ জানুয়ারি বই উৎসব করা সম্ভব নয় এটা এনসিটিবি ধরে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রাথমিকের ১০ কোটি ৩৬ লাখ বইয়ের মধ্যে ৭ কোটি ৮০ লাখের ৪০ হাজারের বেশি বই প্রিন্ট হয়েছে। যা মোট বইয়ের ৭৫ শতাংশের বেশি। আর ৬ কোটি ৪৮ লাখের বেশি বইয়ের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। যা মোট বইয়ের ৬৩ শতাংশ। ৫০৮টি উপজেলার মধ্যে ৪২৫টি উপজেলায় বই পৌঁছেছে। সাড়ে ১০ কোটি বইয়ের কাজ করছে ৩২টি প্রতিষ্ঠান।