আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন : নড়েচড়ে বসেছে সব দল

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। নড়েচড়ে বসছে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দল। ঘর গোছানোর পাশাপাশি জোর প্রস্তুতি চলছে ভোটযুদ্ধের। অন্তদ্বন্দ্ব দূর করারও নানামুখি উদ্যোগ নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যসহ বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রায় সকলে।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্য দলগুলো প্রার্থী বাছাই, ইশতেহার তৈরিসহ নির্বাচনের আনুষঙ্গিক কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে। নির্বাচনের হাওয়া কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলেও লেগেছে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যেও আগামী নির্বাচন নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। এছাড়া রোডম্যাপ ঘোষণার মধ্যদিয়ে নির্বাচন কমিশনও (ইসি) জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। নিরপেক্ষতা প্রমাণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এরই অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক সংলাপ করেছে ইসি। সব মিলিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নির্বাচনী ডামাডোল বাজতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে বড় দুই দলের রাজনৈতিক তিক্ততাও। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা কাদা ছোড়াছুড়ি ছেড়ে ইতিবাচক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি রাজনৈতিক অঙ্গণে সুবাতাসের ইঙ্গিত। এছাড়া আদালতে দেয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য খুবই ইতিবাচক। প্রতিহিংসা নয়, দেশের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান ও বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের নিয়েও তার (খালেদা জিয়া) ইতিবাচক মন্তব্য প্রশংসাযোগ্য বলেও মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা।
সরকারও তাদের কঠোর অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে বলেও মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে কক্সবাজার যান। ফেনীতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সফরে কোনো ধরনের বাধা দেয়া হয়নি। বরং খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশ সতর্ক ও তৎপর দেখা গেছে। শুধু তা-ই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা ব্যাপক শোডাউন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়নি। উল্টো শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনে তারা সহায়তা করেছে। সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন আচরণ করে। সর্বশেষ ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ নিয়ে শুরু থেকেই ইতিবাচক ছিলো সরকার। সিপিএ সম্মেলনের কারণে ৮ নভেম্বর সমাবেশের অনুমতি দেয়া সম্ভব নয়-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন মনোভাব জানার পর বিএনপি সমাবেশের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেয়। ১২ নভেম্বর তারা সমাবেশের অনুমতি চাওয়ার পরই ইতিবাচক মনোভাব দেখান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার পর বিএনপিকে মৌখিকভাবে অনুমতি দেয়া হয়। আজ চিঠির মাধ্যমে তা জানিয়ে দেয়ার কথা। দীর্ঘদিন পর ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারার সৃষ্টি হবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের ইতিবাচক মনোভাবের পাশাপাশি মাঠের বিরোধী দলের কর্মকাণ্ডেও একই মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ৭ নভেম্বর শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানানোর অনুমতি দেয়নি সরকার। কিন্তু তারপরও বিএনপির পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ বা কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি। আপাতত রাজপথে জ্বালাও-পোড়াওসহ কোনো ধরনের সংঘাতে জড়াতে চায় না দলটি।

সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপির সমাবেশের মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পরই বৃহস্পতিবার আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিলো অনেকটা ইতিবাচক। তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, ‘মতবৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয়ই হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজের সৌন্দর্য। ভিন্নমত দলন ও দমন নয়, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা নয়, বরং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহ-অবস্থানকে উৎসাহিত না করলে গণতন্ত্র টেকানো যায় না। আমি পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করি যে, আমার এবং শহীদ জিয়াউর রহমানসহ আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ক্রমাগত অশোভন উক্তি এবং প্রতিহিংসামূলক বৈরী আচরণ সত্ত্বেও আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। আমি তার প্রতি কোনো প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করব না।’

খালেদা জিয়ার বক্তব্য ও সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপির সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও ইতিবাচক বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, তবে দুই দলের মধ্যে আপাতত সমঝোতার কোনো লক্ষণ নেই। এজন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। দুই দল তিক্ততা ভুলে ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা তার। এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। নির্বাচনী মাঠ সরগরম হতে শুরু করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ আমাদের দেশের মানুষ নির্বাচনকে একটা উৎসব মনে করে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ সরগরম হবে। তবে ওই নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ হবে, তা নির্ভর করবে সরকারের ইচ্ছার ওপর। সিটি নির্বাচন সরকারের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এ নির্বাচনের প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

নির্বাচনী তোড়জোড় ও সাম্প্রতিক দুই দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, অবশ্যই এটি গণতন্ত্রের জন্য ভালো। এর মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের পর দেশে যে গুমোট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কিছুটা হালকা হবে। দুই দলের মধ্যে বরফ গলার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। উচ্চবাচ্য না করেও আভাস পাওয়া যাচ্ছে কোথাও কোনো সমঝোতা হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বড় দুই দলের মধ্যে সমঝোতা আগামী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। নির্বাচনটা উৎসবমুখর হবে। নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি। তবুও রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে