নিঃসন্তান তিন দম্পতির আবেদন শুনানির সময় আদালত প্রাঙ্গণে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সেই কন্যাশিশু খুঁজে পেয়েছে ঠিকানা। আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত মেহেরপুরের এক দম্পতিকে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। প্রায় এক ঘণ্টা শুনানি শেষে গতকাল বুধবার বিকেলে আদালত এ আদেশ দেন। নবজাতককে পাওয়ার জন্য নিঃসন্তান তিন দম্পতির তরফে আবেদন করা হয়।
নবজাতকে সন্তান হিসেবে পাওয়ার আশায় তিন দম্পতির আবেদন শুনানির সময় আদালত প্রাঙ্গণে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। নিঃসন্তান দম্পতিদের আকুতি উপস্থাপন করেন তাদের নিযুক্ত আইনজীবীরা। আদেশের সময় পুরো কোর্ট চত্বর স্তব্ধ হয়ে যায়। সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে নবজাতক শিশু ফাতেমা তুজ জহুরাকে আজ বৃহস্পতিবার ওই দম্পতির কাছে বুঝে দেয়া হবে। শিশুর নতুন নাম দেয়া হয়েছে নুরে হেদায়েতুল আমেনা। নবজাতককে পাওয়ার আশায় আবেদন করা দম্পতিদের পক্ষে শুনানির শেষ পর্যায়ে বিজ্ঞ বিচারক বলেন, আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তবু এক দম্পতির পক্ষে আমাকে রায় দিতেই হচ্ছে। পরে তিনি রায় ঘোষণা করেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে খুশি নামের এক কিশোরী চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে কন্যা সন্তান প্রসব করে। শুক্রবার সকালে সদ্যপ্রসূত কন্যাশিশুকে হাসপাতালে ফেলে রেখে কিশোরী প্রসূতি মা পালিয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে স্টাফ নার্স তৃষ্ণা মনি ও পরে সমাজ সেবা অধিদফতরের কাছে ওই শিশুকে হস্তান্তর করে। সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের আয়া ইসমত আরা ও চম্পা খাতুনকে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেয় ওই শিশুকে সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য। তারা শিশুর নাম রাখেন ফাতেমাতুজ জোহুরা। অনেকেই ওই শিশুকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে গত সোমবার বিষয়টি আদালতে গড়ায়। ওই শিশুকে পেতে নিঃসন্তান তিন দম্পতি একই দিন আদালতে আবেদন করেন। আদালত বুধবার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম ও শিশু আদালতের বিচারক সাহানাজ সুলতানা বুধবার পুনর্শুশুনানি করেন। প্রায় এক ঘণ্টা শুনানি শেষে বেলা সাড়ে ৪টায় রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালত বলেন, আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তবু এক দম্পতির পক্ষে আমাকে রায় দিতেই হচ্ছে। পরে তিনি রায় ঘোষণা করেন। ঘোষিত রায়ে মেহেরপুর হালদারটাড়ার নিঃসন্তান এসআই আবদুল আলীম ও জান্নাতুল ফেরদৌস শিশু ফাতেমা তুজ জোহুরাকে পান। আবদুল আলীম বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পলাশপাড়ার বাসিন্দা ও চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত। বিয়ের পাঁচ বছরেও তাদের সন্তান হয়নি। আদালতের রায়ের পর আবদুল আলীম বলেন, ‘আমরা নিঃসন্তান। আল্লাহ আমাদের মুখপানে চেয়েছেন। আমরা ফাতেমা তুজ জোহুরাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলব।’ তিনি আরও বলেন ‘আমরা ওর নতুন নাম দিয়েছি নুরে হেদায়েতুল আমেনা।’ জেলা সমাজসেবা অফিসসূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার আবদুল আলীম দম্পতির কাছে ওই শিশুকে বুঝে দেয়া হবে।