স্টাফ রিপোর্টার: বাড্ডায় অন্য একটি বাসায় ভাড়া থাকার সময় শাহীন মল্লিক নামে এক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে আরজিনার পরিচয় হয়। আরজিনার মতো শাহিন মল্লিকও সংসারী। রয়েছে সন্তান। এর মধ্যেও আরজিনা-শাহিন দু’জন দু’জনার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। সম্পর্ক গড়ায় শারীরিক পর্যায়ে। তবে বিষয়টি আরজিনার স্বামী জামিল শেখের অজানাই ছিলো।
৪ মাস আগে জামিল শেখ হঠাৎ বাসা পরিবর্তন করে। উঠেন বাড্ডার ময়নারবাগের পাঠান ভিলার তৃতীয় তলায়। আরজিনা কৌশলে প্রেমিক শাহীনকে একটি কক্ষ সাবলেট ভাড়া দেয়। চলতে থাকে আরজিনা-শাহিনের উন্মুত্ত প্রেম। পক্ষান্তরে, স্বামী জামিলের সঙ্গে আরজিনার ঝগড়া-বিবাদ বাড়তে থাকে। পরকীয়া প্রকাশ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পেয়ে বসে আরজিনা-শাহিনকে। এরপরই জামিল শেখকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে আরজিনা-শাহিন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বৃস্পতিবার গভীররাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জামিল শেখকে হত্যা করে শাহীন। তাকে ঘরে প্রবেশ করা থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয় আরজিনা। একপর্যায়ে মেয়ে নুসরাত ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাকেও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।’ বাবা ও মেয়ের জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নিহত জামিলের স্ত্রী আরজিনা বেগম পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লোমহর্ষক এমন তথ্য জানিয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল ভোরে খুলনায় অভিযান চালিয়ে আরজিনার পরকীয়া প্রেমিক শাহীন মল্লিক ও তার স্ত্রী মাসুমাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি ভ্রাম্যমাণ টিম।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে বাড্ডা থানাধীন ময়নারবাগ কবরস্থান রোডের ৩০৬ নম্বর পাঠান ভিলার তৃতীয় তলায় নৃশংসভাবে খুন হন জামিল শেখ (৩৮) নামে এক গাড়ি চালক এবং মেয়ে নুসরাত জাহান (৯)। ঘটনার সময় জামিলের স্ত্রী আরজিনা বেগম তার আরেক ছেলে সন্তানকে নিয়ে বাসায় ছিলেন। চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, জামিলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এবং নুসরাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরজিনা বেগমকে আটক করে পুলিশ।
সূত্র জানায়, এ ঘটনায় নিহত জামিলের ভাই শামীম শেখ বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলা নম্বর-৩। মামলায় জামিলের স্ত্রী আরজিনা ও ভাড়াটিয়া শাহীন মল্লিককে আসামি করা হয়। গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহীন মল্লিক ও তার স্ত্রী মাসুমাকে আটক করে। এ বিষয়ে পুলিশের বাড্ডা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আশরাফুল কবীর জানান, ৪ মাস আগে ময়নারবাগের পাঠান ভিলা নামে একটি ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে ওঠেন জামিল শেখ। তবে এর আগে একই এলাকায় আরেকটি বাড়িতে ভাড়া ছিলেন জামিল শেখ। সেই বাড়িতে জামিলের স্ত্রী আরজিনার সঙ্গে আরেক ভাড়াটিয়া শাহীন মল্লিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয় থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি জানান, একপর্যায়ে তারা পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। আরজিনা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে যে, তাদের পরকীয়ায় বাধা হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই তিনি এবং তার প্রেমিক শাহীন মল্লিক স্বামী জামিল ও তার মেয়েকে হত্যা করেছে। তিনি আরো জানান, পুলিশ ঘটনার পরেই জামিলের স্ত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। প্রথমে সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য দিতে চাচ্ছিল না। গরমিল তথ্য দিচ্ছিল। অসংলগ্ন কথা বলছিলো। অব্যাহত জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে আরজিনা তার দোষ স্বীকার করে। তাদের রিমান্ডে এনে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।