চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে মতবিনিময়সভায় হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি
স্টাফ রির্পোটার: হাসপাতালের উন্নয়নে আমরা যৌথভাবে কাজ করব। বৃহত এ হাসপাতালে নানান সমস্য রয়েছে। সমস্যগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির মতবিনিময়সভায় সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এ কথা বলেন। তিনি চিকিৎসকদের স্মরণ করে দিয়ে বলেন, আপনারা মানব সেবার মহান দায়িত্ব নিয়ে এ পেশায় এসেছেন। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুন। অফিস সময়ে (সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত) রোগী দেখার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। প্রায় ১ বছর পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালের রাজস্ব আয়, বহিঃবিভাগ ও অন্তঃবিভাগে রোগী দেখার হিসাব উপস্থাপন করা হয়। হিসাব উপস্থাপন করেন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও বিদায়ী সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায়। তিনি জানান বহিঃবিভাগ, জরুরী বিভাগে টিকিট বিক্রি, প্যাথলজি, এক্স-রে, কেবিন , অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া থেকে আয় হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬৭ টাকা। এছাড়া অপারেশন করা হয়েছে ২ হাজার ৫৩৭ জন। বহিঃবিভাগে রোগী দেখা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯২ জন, অন্তঃবিভাগে ৬৭ হাজার ৮৭১ জন ও জরুরী বিভাগে রোগী দেখা হয়েছে ৬৬ হাজার ৮৬০ জন। গত বছরের ৯ নভেম্বর সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন করা হয়।
পরে হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বক্তব্য দেন ডা. পরিতোষ কুমার ঘোষ, ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির, বিএমএ সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী, হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধি আমজাদুল ইসলাম চঞ্চল। তারা বলেন, ১০০ শষ্যার হাসপাতালে মাঝে মাঝে রোগী ভর্তি থাকে ২৫০/২৬০ জন। অনেক সময় কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তি জোর করে সোয়াইন ফ্লু রোগের জন্য যে ৪টি কেবিন রয়েছে সেখানে থাকেন। এখানে রোগী থাকলে চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তারা সোয়াইন ফ্লু কেবিন বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দেন। রোগীদের জন্য হাসপাতালে ২০টি বাথরুম রয়েছে। সেগুলো পরিস্কারের জন্য হারপিক ও ব্লিচিং পাওডার দেয়া হয় খুবই সামান্য । যা দিয়ে বাথরুম পরিস্কার করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। এছাড়া বড় ওভারহেড পানির ট্যাংকি দীর্ঘ দিন পরিস্কার না করায় প্রচুর ময়লা জমেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন জরুরী হয়ে পড়েছে। রয়েছে দালালের উৎপাত। তারা কর্তৃপক্ষের নিকট হাসপাতালের জন্য আরো ৮টি ফ্যান, ১০টি রড লাইট ও প্রয়োজনীয় হারপিক বরাদ্দের আহবান জানান।
পরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি আজাদ মালিতা, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএ টিভি প্রতিনিধি বিপুল আশরাফ বলেন, ২৪ অক্টোবর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক আব্দুস সালামের একমাত্র মেয়ে সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী অর্ণার মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনদের অভিযোগ। সাংবাদিকদ্বয় বলেন, অর্ণার মত যেন আর কেউ মারা না যান। তারা বলেন, ২১ জন চিকিৎসক যদি অফিস সময়ে ঠিকমত ডিউটি করেন তাহলে দূরদূরান্ত থেকে শত শত রোগী উপকৃত হবে।
সদর মডেল হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার উদ্দিন জোয়ার্দ্দার দুলু বলেন, হাসপাতাল আঙ্গিনা পরিস্কার রাখার জন্য ৫ জন সুইপার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে ছোট খাট অনেক সমস্যার সমাধান করা হয় দানশীল ব্যক্তিদের সহায়তার টাকায়। এছাড়াও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরহাদ হোসেন।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি বলেন, সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের মার্চে ২৫০ বেডের জন্য নির্মিত ভবন চালু করা হবে। তখন হাসপাতলের অনেক সমস্যাই কেটে যাবে। দালালমুক্ত করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে মাসে অনন্ত এক-দুই বার ভ্রাম্যমান আদালত বসানোর অনুরোধ করেন। মেডিসিনের একজন চিকিৎসক ও নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। শেষে আব্দুস সালামের মেয়ে অর্ণার মৃত্যুতে গভীর শোক দূঃখ প্রকাশ করা হয়।