আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার চর যাদবপুর গ্রামের কলেজ ছাত্র হাসানের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গ্রামের ঈদগাহ ময়দানের একটি জামগাছ থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকালই ময়না তদন্ত শেষে পারিবারিক কবরস্থানে হাসানের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়। এদিকে তার লিখে যাওয়া একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। চিরকুটের সূত্র ধরে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়নের চর যাদবপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে হাসানুজ্জামান হাসান এবার ডিগ্রি পরীক্ষা ফলপ্রার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বছর খানেক আগে আলমডাঙ্গার মাদারহুদা গ্রামের কলেজছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে শুরু হয় টানাপোড়েন। প্রেম সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সে আত্মহত্যা করেছে বলে তার প্রতিবেশীদের পক্ষ থেকে জানানো হলেও হাসান আত্মহত্যার আগে নোট লিখে যায়। আলমডাঙ্গা থানার এসআই মহব্বত আলী জানান, খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে হাসানের মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় এবং তার মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে তার হাতের লেখা একটি চিঠি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। মৃত্যুর আগে হাসান চিঠিতে লিখে গেছে “মা-আব্বা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি চলে গেলাম না ফেরার দেশে। শরীরের প্রতি যতœ নিও। তোমরা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছো, আমি কিছু দিতে পারিনি। এ জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। হোসাইনের দিকে খেয়াল রেখো, ওকে লেখাপড়া শেখাও। হোসাইন প্রিয় আব্বা-মাকে কষ্ট দিস না। আমাকে নিয়ে আমার আব্বা-মার অনেক স্বপ্ন ছিলো, আমি পূরণ করতে পারিনি, তুই পূরণ করিস, দাদা-দাদিকে দেখিস। আমার অনুরোধ রইলো আমার মৃত্যুর জন্য কাউকে দোষারোপ করো না, কারো নামে কেস করো না।”
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতপরশু সোমবার সন্ধ্যায় হাসান পরিবারের সবার সাথে রাতের ভাত খায়। ভাত খেয়ে সে বাড়ির পিছনের ক্যানেলের দিকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু রাত বেড়ে চললেও হাসান বাড়ি ফিরে আসেনা। এদিক-ওদিক অনেক খোঁজাখুঁজি করেও হাসানকে না পেয়ে বাড়ির লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েন। খুব সকালে ক্যানেলের পাশ ঘেষে কৃষকরা মাঠে যাওয়ার সময় গাছের সাথে হাসানের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। খবর দেয়া হয় থানা পুলিশকে। নিহত হাসান দুভাইয়ের মধ্যে বড়। সে আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ থেকে এবছর ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। গতকাল বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে হাসানের মরদেহ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।