দামুড়হুদার ঠাকুরপুর সিমান্তে ধুড় পাচারচক্র বেপরোয়া

৩ সপ্তাহের মাথায় আরও ৯ বাংলাদেশি নাগরিক আটক
দর্শনা অফিস: মাস না পেরুতেই ফের দামুড়হুদার ঠাঁকুরপুর সিমান্তে বিএসএফ’র ধাওয়া খেয়ে ফেরত আসা ৯ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে বিজিবি। মাত্র ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অপচেষ্টাকারী ২৯ জনকে আটক করলো বিজিবি সদস্যরা। দামুড়হুদার ঠাকুরপুর ও মুন্সিপুর সীমান্তে ধুড় পাচারকারীচক্রের সদস্যরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। ধুড়রা ধরা পরলেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে পাচারকারীচক্রের সদস্যরা। যে কারণে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশ ও ভারত ছিলো একীভূত। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তান হিসেবেই তখন ছিলো বাংলাদেশের পরিচয়। ১৯৭১ সালে স্বাধিকার আন্দোলনে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে জন্ম হয় সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশের। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর অনেকেই চলে আসে এদেশে। পাশাপাশি ভারতে থেকে যায় স্বজনেরা। সে কারণেই ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারীর সংখ্যা বেড়েছে। দু’দেশের মধ্যে পাসপোর্ট-ভিসার মাধ্যমে যাতায়াত করা হয়ে থাকে। বিনা পাসপোর্ট ও ভিসায় ভারতে যাতায়াতকারীদের ধুড় বলা হয়। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া চোরাই পথে যারা ভারতে প্রবেশ করে থাকেন, তাদের মধ্যে অনেককে জীবন দিতে হয়েছে বিএসএফ’র গুলিতে। কেউ কেউ দীর্ঘদিন কারাভোগ করছে। নারীদের বিক্রি করা হচ্ছে ভারতীয় নিষিদ্ধ পল্লিতে। তবুও থেমে নেই ধুড় পাচার। এক শ্রেণীর ধুড় পাচারচক্র দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে বেপরোয়া। বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তে ধুড় পাচারকারীচক্রের সদস্যরা রয়েছে সক্রিয় অবস্থানে। এ চক্র ধুড় পাচার করে কামাচ্ছে প্রচুর অর্থ। দেশের অল্প আয়ের মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই ধুড়পাচারকারীচক্রের খপ্পরে পড়ে ভারতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবুও বন্ধ হয়নি ধুড় পাচার। দামুড়হুদার ঠাকুরপুর, মুন্সিপুর ও পীরপুরকুল্ল¬া ও দর্শনা জয়নগর সীমান্ত পথে দীর্ঘদিন ধরে ধুড় পাচার করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, বিনা পাসপোর্ট-ভিসায় ভারতে পাচারের জন্য জনপ্রতি নেয়া হয়ে থাকে ৪ হাজার টাকা। দালালচক্রের সদস্যরা অনেকটাই জামাই আদরের মতো করেই ধুড়দের রাখে বাড়িতে। রাতের আঁধারে বা দিনের আলোয় সুযোগ-সুবিধা বুঝে ভারতের দালালদের হাতে তুলে দেয়া হয় ধুড়দের। মাত্র ২১ দিনের মাথায় একই সীমান্ত পথে অবৈধ উপায়ে ভারতে প্রবেশ করে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলার জিকারবাড়ি গ্রামের আদান বৈরাগীর ২ ছেলে শ্রী অসিম বৈরাগী (২০), শ্রী হৃদয় বৈরাগী (১৯) ও স্ত্রী তাপসী বৈরাগী (৪০), নিখিল বৈরাগীর স্ত্রী সঙ্গীতা বৈরাগী (১৯), বাবুল বৈরাগীর স্ত্রী তুনু বৈরাগী (২০), ও তার তিন বছর বয়সী শিশুপুত্র রাহুল বৈরাগী, নিখিল বৈরাগীর স্ত্রী সন্ধ্যা বৈরাগী (৪০) ও ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার পূর্বমোড়া গ্রামের সরজিদ বিশ্বাসের স্ত্রী চম্পা বিশ্বাস (২০) ও তার ২ বছর বয়সী শিশু কন্যা অনুষ্কা বিশ্বাস। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে দামুড়হুদার ঠাকুরপুর সীমান্তের ৮৮ নং মেন পিলারের কাছ থেকে এ ৯ জনকে আটক করেছে ঠাকুরপুর বিজিবি সদস্যরা। ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার খলিলুর রহমান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সঙ্গীয় সদস্যদের নিয়ে এ আটক অভিযান চালিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, ভোরে ধুড়পাচারচক্রের সদস্যরা সুযোগ বুঝে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে ৯ জনকে ভারতের দালালচক্রের হাতে তুলে দেয়। এ সময় ভারতের মালোয়াপাড়া ক্যাম্পের টহল বিএসএফ সদস্যরা ধাওয়া করলেও দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয় বাংলাদেশি ৯ নাগরিক। এ ঘটনায় নায়েব সুবেদার খলিলুর রহমান বাদি হয়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। উল্লেখ্য চলতি মাসের ৭ তারিখে একই সীমান্ত পথে ভারতে অবৈধ প্রবেশের প্রস্তুতিকালে তালসারি ডিসি ইকো পার্ক থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় ২০ জন বাংলাদেশি নাগরিক। গ্রেফতারকৃতরা ছিলো গোপালগঞ্জ জেলার মখছেদপুর উপজেলার বাগাদী গ্রামের অভিলাষের ছেলে মানব মন্ডল (৩৮), চকসিং গ্রামের বিরেনের ছেলে বিষ্ণ বৈরাগী (৩০), পাটকেলবাড়ির সমন ম-লের ছেলে মহানন্দ ম-ল (১৪), গোয়ালগ্রামের কানাই লাল সরকারের ছেলে পংকন সরকার (১৮), বাসুদেবপুরের অমিত্য বিশ্বাসের ছেলে অনিমিকা (২৩), ভাটিকামারী গ্রামের বলরাম ম-লের ছেলে গৌর ম-ল (২১), কালিগ্রামের তারাপদ মলি¬কের ছেলে সমিরন মলি¬ক (১৬), দুর্লভ বরইয়ের ছেলে বিলাশ বরই (৩০), নিশ্চিন্তপুর গ্রামের নিরঞ্জন সরকারের ছেলে নিহার সরকার (৫০), নয়াকান্দি গ্রামের মহন্ত বৈরাগীর ছেলে অনন্ত বৈরাগী (৬৩) ও অনন্ত কুমারের স্ত্রী পরমিলা (৪৫), কালি বরইয়ের ছেলে ডালি বরই (৬০) বাঘাদিয়া গ্রামের মানব মন্ডলের স্ত্রী কাকলী মন্ডল (৩২), জলিলপুরের আনন্দ বৈরাগীর স্ত্রী রিনা বৈরাগী (৪৫), পাটকামারী গ্রামের বলাই ম-লের স্ত্রী হাসি (৬০), টিকারডাঙ্গা গ্রামের সুকান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী শ্যামলী বিশ্বাস (২৪), গায়েন্দারপুর গ্রামের মঙ্গল ম-লের স্ত্রী নিলীমা (৪০), মেয়ে পূজা (৫), শরিয়তপুর জেলার পালং উপজেলার ডোংসার গ্রামের যামিনী পালের ছেলে কৃষ্ণপাল (৬২) ও কৃষ্ণপালের স্ত্রী আলো রানী পাল (৫০)। এভাবে ধুড় পাচারের কারণে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের মানুষের, অন্যদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সেই সাথে দেশের মর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে বহির্বিশ্বে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত ধুড়পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের পরিচালক ও পুলিশ সুপারের কাছে দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।