চিনির পরিবর্তে আমরা খাচ্ছি মেগনেসিয়াম সালফেট

চকচকে মোড়কে বিদেশি শাদা ধবধবে চিনি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর
দর্শনা অফিস: মানবদেহের জন্য চরমভাবে ক্ষতিকর ঘনচিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট। এ চিনির দাম কমাতে সাথে মেশানো হয় বিষাক্ত সার ম্যাগনেসিয়াম সালফেট। এ যেনো বিষের সাথে বিষ মিশিয়ে বানানো বিকল্প চিনি। শাদা ধবধবে দেখতে সুন্দর এ বিকল্প চিনির এক কেজিতে ৫০ কেজি আসল চিনির কাজ হয়। এই ভেজাল ঘন চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য, চকলেট, আইসক্রিম, কনডেন্সড মিল্ক, বেকারি ও বেভারেজ দ্রব্য। বিষ মেশানো এসব খাবার খেয়ে ক্যান্সার, কিডনি বিকল, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর ওই চিনির কারণে দেশে উৎপাদিত চিনির কদর কমেছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিব, কেরুজ চিনিকলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন জানান, স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ঘন চিনি ভিন্ন ভিন্ন নামে আমদানি করছে এক শ্রেণির আমদানিকারক। সাইট্রিক এসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ঘোষণা দিয়ে এসব ঘন চিনি আমদানি করা হচ্ছে। কারণ এই ৩টি পণ্য দেখতে হুবহু ঘন চিনির মতো। এ চিনির শুল্কহারও অনেক কম, কিন্তু স্বাদে রয়েছে পার্থক্য। এ ঘন চিনি ক্যান্সারসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে, যে কারণে ১৯৬০ সালে যুক্তরাজ্য এবং ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র এ চিনি ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বাংলাদেশেও এ রাসায়নিক আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু দেখতে একই রকম হওয়ায় সাইট্রিক এসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট নাম দিয়ে দেশে এ রাসায়নিক আমদানি করছে কোনো কোনো আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বেশি লাভের আশায় এসব পণ্য আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজর দেয়া উচিত বলে দাবি করেছে সচেতন মহল। সর্বনাশা বিদেশি বিষাক্ত চিনির ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে হলেও দেশীয় চিনির উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন বাচাতে হবে সরকারের মূল্যবান সম্পদ চিনিশিল্প, অন্যদিকে বেশি বেশি আখচাষের মাধ্যমে চিনির ঘাটতি পূরণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বেশি বেশি আখচাষের দিকে ঝুঁকে পড়তে হবে কৃষকদের। এরই মধ্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সকল চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আখচাষ বাধ্যতামূলক। চিনিকলের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ আখচাষ না করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত অনেকটাই সাড়া মিলতে শুরু করেছে। তবে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, আখের দাম বাড়ানো ও কৃষকের দুর্ভোগ লাঘবসহ কৃষি সেবা নিশ্চিত করলে আখচাষ অবশ্যই বাড়বে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন জানান, ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুমে দেশের ১৫ চিনিকলে সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১ লাখ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চিনি শিল্পকে রক্ষা করতে ও চিনি উৎপাদন বাড়াতে গ্রহণ করা হয়েছে নানামুখী কর্মসূচি। ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে আখের মূল্য। কৃষকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কড়াভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আখের পুঁজি ও আখের মূল্য পরিশোধে আধুনিক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমেই কৃষকরা তাদের আখের মূল্য ঘরে বসে পেয়ে যাবে। আখ রোপণের ক্ষেত্রে কৃষিপন্য সরবরাহের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের ১৫ চিনিকলে কৃষকদের সাথে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময়সভা অব্যাহত রাখা হয়েছে। সেই সাথে সকল চিনিকলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক আষচাষের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় গ্রহণ করা হবে বদলিসহ অন্যান্য ব্যবস্থা। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন বলেছেন, আখচাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। দফায় দফায় সভা-সমাবেশসহ চাষিদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি। এবারের আখ মাড়াই মরসুমে করপোরেশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টার পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিষ্টা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার আহ্বান করা হয়েছে। চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ব্যপারে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই। কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) সরোয়ারদি জানানা, এবারের মরসুমে কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব ১ হাজার ৭শ একর জমিসহ ৬ হাজার ৬৮৫ একর জমিতে আখচাষ করা হয়েছে। চলতি মরসুমের তুলনায় আগামী মরসুমে আখের পরিমাণ থাকছে দ্বিগুণ। চলতি রোপণ মরসুমে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে কেরুজ নিজস্ব দেড় হাজার একর জমিসহ সাড়ে ১২ হাজার একর জমিতে। আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলে আগামী মাড়াই মরসুমে কয়েক বছরের আখচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে। ফলে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও হবে দ্বিগুণ।