রাজধানীতে অব্যবস্থাপনা–লাঠিপেটার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার: ডিম চাই বিচার চাই, আর কোনো দাবি নাই, ডিম চাই বিচার চাই’, ‘ভুয়া ভুয়া, ভুয়া ভুয়া’, ‘ডিম চোর, ডিম চোর’। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীতে মাত্র ৩০ মিনিটে তিন টাকায় ডিম বিক্রির কর্মসূচি ভণ্ডুল হয়ে গেলে এমন সব স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের অভিযোগ, তিন টাকায় ডিম দেয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষকে ডেকে নিয়ে ডিম না দিয়ে উল্টো লাঠিপেটা করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ- মারধর করতেই এমন বিশৃঙ্খল আয়োজন করা হয়েছিলো। বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে ডিম মেলার আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। এ উপলক্ষে সকাল থেকে সেখানে তিন টাকায় ডিম কিনতে ভিড় করেন নানা বয়সী মানুষ। কেউ পলিথিন ব্যাগ, কেউ বালতি, কেউ ডিমের খাঁচি আবার কেউ কার্টন নিয়ে হাজির হন। আয়োজকরা জানিয়েছিলেন, সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত তিন টাকায় ডিম বিক্রি করা হবে। কিন্তু ডিম মেলা শুরুর চার ঘণ্টা আগে সকাল ৬টা থেকেই খামারবাড়ীতে ভিড় জমাতে শুরু করেন শত শত ক্রেতা। সকাল ৭টার মধ্যেই ডিম কিনতে প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে যান ক্রেতারা। ডিম কেনার এ লাইনে পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারী ও শিশুকেও দাঁড়াতে দেখা যায়। ফার্মগেট মোড় থেকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের পুলিশ বক্স পর্যন্ত নারী-পুরুষের এক কিলোমিটার লম্বা লাইন ছিলো। আর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন থেকে বিজয় সরণি মোড় পর্যন্ত পুরুষদের দুটি লাইন এক কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের ভেতরে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সেখানে পা রাখার মতো পরিস্থিতিও ছিলো না। ক্রেতাদের বিপুল সমাগমের কারণে শুরুতেই হিমশিম খান আয়োজকরা। এর চাপ সামলাতে ১০টার আগেই পাঁচটি কাউন্টারের মাধ্যমে ডিম বিক্রি শুরু করেন তারা।
তিন টাকা পিস মূল্যে সর্বোচ্চ ৯০টি করে ডিম দেয়ার কথা থাকলেও মানুষের চাপ দেখে আয়োজকরা শুরুতেই জানান ৩০টি করে ডিম বিক্রি করা হবে। একটু পরেই জানানো হয় ২০টি করে ডিম বিক্রি করা হবে। এর কিছুক্ষণ পর দেখা যায় প্যাকেটে ভরে ১২টি করে ডিম দেয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। এভাবে প্রায় ২৫ মিনিট ডিম বিক্রি হয়। এর পরই দেখা দেয় তীব্র বিশৃঙ্খলা। কিছুক্ষণের মধ্যে ক্রেতা ও আয়োজকদের ধাক্কাধাক্কিতে ভেঙে পড়ে ডিম বিতরণের অস্থায়ী মঞ্চ। এ সময় পুলিশ হস্তক্ষেপ শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যায়। ডিম বিতরণস্থলে ভাংচুর শুরু করে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। ডিম কিনতে না পেরে ক্ষুব্ধ লোকজন বিক্ষোভ শুরু করেন।
অনেকে ক্ষোভে হাতে থাকা ডিমের ট্রে, বালতি আছড়ে ভেঙে ফেলেন। কেউবা ডিম মাটিতে নিক্ষেপ করতে থাকেন। যে ক্রেতা ডিম পাননি তিনি অন্যের ডিম কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কেউ আবার কাউন্টারে ডিম ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এতে বেশ কয়েক খাঁচি ডিম ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। একপর্যায়ে খামারবাড়ীসংলগ্ন লেনে যান চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। তারা পরিস্থিতি সামলাতে ক্রোধের মেলা প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে দিতে লাঠিপেটা করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেলা আঙিনায় মাইকিং করে ডিম বিক্রি স্থগিত করার ঘোষণা দেন আয়োজক কমিটির সদস্য শ্যামলী পোলট্রি লিমিটেডের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, খুব শিগগির নতুন দিন নির্ধারণ করে ঢাকার বিভিন্ন স্পটে তিন টাকা মূল্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম বিক্রি করা হবে।
ডিম কিনতে না পেয়ে বিষণ্ণ মনে বাসায় ফিরে যাচ্ছিলেন ফার্মগেটের তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন। তার মাথায় ও শার্টে কাঁচা ডিমের দাগ ছিল। তিনি বলেন, ধাক্কাধাক্কির সময় মাথা-গায়ে অনেক ডিম এসে পড়ে। শার্টটি নষ্ট হয়ে গেলো ডিম কিনতে এসে, ডিম তো পেলামই না উল্টো নতুন শার্ট নষ্ট হল।
যারা সঠিকভাবে মেলা আয়োজন করতে পারবে না, তারা কেন এ ধরনের আয়োজন করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন আলমগীর। পূর্ব রাজাবাজার থেকে আসা নাসরিন বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারলাম না। তিনি বলেন, ডিমের সংকট থাকলে আয়োজকদের এত বেশি প্রচারণা চালানোর দরকার ছিল না। ডিম পাব না। এখানে মারামারি হবে। তাই চলে যাচ্ছি। নুর মোহাম্মদ নামে মধ্য বয়সী এক লোক অনেকক্ষণ ধরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্ট করছিলেন। কাছে যেতে তিনি বলেন, ভাই সবার আগে আমি এখানে এসেছি। লাইনে দাঁড়িয়েছি ডিমও পেয়েছি ১২টা। এত কষ্ট করে ১২টা ডিম পেলাম অথচ কে যেন থাবা মেরে আমার ডিম নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে এখানে চলে এসেছি। অথচ শূন্যহাতে আমাকে বাসায় যেতে হচ্ছে- এ প্রতারণার বিচার চাই আমি। উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে বিপিআইসিসির সভাপতি মসিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ৫০ হাজার ডিম বিক্রির কথা থাকলেও এক লাখ ডিম আমরা হাতে রেখেছিলাম, যাতে কেউ খালি হাতে ফিরে না যায়। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভিড় হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ ও আমাদের ভোলান্টিয়ারি সার্ভিস ঠিক ছিল। আমাদের ডাকে এত লোক আসবে আমরা ভাবতেই পারিনি। যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ হয়েছে, তার জন্য আমরা দুঃখিত।