ব্লু হোয়েল মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ছে : ধরা পড়ছে একের পর এক আসক্তি

স্টাফ রিপোর্টার: ইন্টারনেটভিত্তিক মরণঘাতি ‘ব্লু হোয়েল গেম’ মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে মাঠে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ব্যাপক কর্মসূচির অংশ হিসেবে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। এ কারণে একের পর এক ধরা পড়ছে ‘ব্লু হোয়েল গেম’ আসক্ত কিশোর-কিশোরী। ব্লু হোয়েল সতর্কবার্তা ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই নিজ নিজ বন্ধুদের বিশেষ বার্তা পাঠাচ্ছেন: সাবধান, বাংলাদেশেও পৌঁছে গেছে ব্লু হোয়েল গেম! সরকারের নানা পদক্ষেপ ও সতর্কবার্তা মা-বাবাদের অনেক সতর্ক করতে সক্ষম হয়েছে।

‘ব্লু হোয়েল’ গেম খেলে ১৭ বছরের এক কিশোরকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে কৌতূহলবসত ‘ব্লু হোয়েল’ গেম খেলতো। গেমটির নির্দেশনা মানতে মানতে এক পর্যায় নিজের শরীরে ব্লেড দিয়ে ক্ষত করেছে সে। গেমটির শেষের স্টেজে এসে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোর আত্মহত্যার জন্য ঘুমের ওষুধ খায়। মিরপুর কাজীপাড়ার বাসা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অচেতন অবস্থায় ওই কিশোরকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়। ওই কিশোর জানায়, ডার্ক ওয়েব থেকে আমি এই গেমের লিংকটি পাই। চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় আমি গেমটি খেলা শুরু করি। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ভালো লাগত। অ্যাডমিনরা অনেক সময় অপমান করে কথা বলত, আমাকে বোকা বলত। তাই আমি চ্যালেঞ্জগুলো পার করতাম। এখন একটু অসুস্থ বোধ করছি। আম্মুকে বলেছিলাম এখানে আনলে আমি ভালো হবো না। তাও আমাকে নিয়ে এসেছে। ওই কিশোর বর্তমানে ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনে একটি পেয়িং বেডে চিকিত্সাধীন রয়েছে। চিকিত্সকরা তার ডান হাতে ক্ষতচিহ্ন দেখতে পেয়েছেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাকে প্লাজমা (সাদা রক্ত) দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ৫ অক্টোবর রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের একটি বাড়ি থেকে অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা নামে এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ব্লু-হোয়েলে আসক্ত চবির আরও ৪ শিক্ষার্থী শনাক্ত: এদিকে ভয়ঙ্কর সুইসাইড গেম ব্লু-হোয়েলের বিভিন্ন ধাপে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আরো চার শিক্ষার্থীর খোঁজ মিলেছে। এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিলেও আসক্ত শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নয় চবি কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। এ প্রসঙ্গে চবি কর্তৃপক্ষের একজন জানান, ব্লু-হোয়েল সুইসাইড গেম। ন্যক্কারজনক এ গেমে জড়িতদের নাম প্রকাশে সহপাঠিও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই সুইসাইড গেম সম্পর্কে জানতে অজানা শিক্ষার্থীরাও কৌতুহলী হয়ে আসক্ত শিক্ষার্থীদের কাছে যাবে। তিনি জানান, ব্লু-হোয়েল গেমে আসক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৪ শিক্ষার্থীর সন্ধান মিলেছে। তাদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ পুলিশকে অবগত করেছে। তবে তাদের নাম কোনোভাবেই প্রকাশ করা যাবে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ব্লু-হোয়েল গেমে আসক্ত হওয়ার বিষয়টি গত বুধবার সাংবাদিকদের জানান চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মসিউদ্দৌলা রেজা। তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর এ বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থীও মুখ খুলছে না।  তবে এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মুখ চাওয়া-চাওয়ি (সন্দেহ) বেড়ে গেছে বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী আলাপকালে জানান। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ‘ব্লু হোয়েল গেইম’ বাংলাদেশে কারও আত্মহত্যার কারণ হয়েছে কি না, তার তদন্ত করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন। পরে তদন্ত চালিয়ে ব্লু হোয়েল গেমে আত্মহত্যার প্রমাণ পেয়েছে বিটিআরসি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, বাংলাদেশে ‘ব্লু হোয়েল গেইম’ লিংক বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং এর উপর সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, প্রাণঘাতী এই গেমটির ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৮০ জন আত্মহত্যা করেছে। এ গেমের আসল অ্যাডমিন ফিলিপ বুদেকিনকে আটক করা হলেও বিভিন্ন দেশে এর অ্যাডমিন থাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে গেমের প্রভাব এখন ছড়িয়ে পড়ছে সারাবিশ্বে। মনোবিজ্ঞানিরা জানান, ব্লু হোয়েল গেমটি খেললেই মৃত্যুকে আপন মনে হবে, সুইসাইড করতে সহায়ক মনবৃত্তি তৈরি করে এই ব্লাক গেইমটি! অ্যাপ স্টোর, প্লে স্টোর, ইন্টারনেট বা গুগল কোথাও খুঁজে পাবেন না এই গেম, কারণ এটি ভার্চুয়ালি অবৈধ। একমাত্র একজন গেমার যদি আপনাকে ইনবক্সে বা মেইল আমন্ত্রণ করে, তবেই খুঁজে পেতে পারেন গেমটি। কারো পাঠানো কোনো গোপন লিংকের মাধ্যমে চলে এই হ্যাকারদের তত্পরতা। জুলিয়া ওভা ও ভের্নিকা ওভা নামক দুই বোন প্রথম এই গেইমের শিকার। গেমটির ৫০তম লেভেলে গিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে ওরা সুইসাইড করেছিলো। জুলিয়া ওভা মৃত্যুর ঠিক আগে সোশাল নেটওয়ার্কে নীল তিমির ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছিলো ‘দ্যা ইন্ড’! গেমটি মূলত একটি ডার্ক ওয়েভের গেম। ডার্ক ওয়েভ হলো ইন্টারনেটের অন্ধকার জগত।

 

Leave a comment