দুর্নীতির আখড়া জীবননগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ওই অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাস ও মোহরার আব্দুস সাত্তারের যোগসাজশে দলিল লেখক সিন্ডিকেট ভূমি ক্রেতাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও বিভিন্ন ভুয়া খাত দেখিয়ে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অবশেষে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আকস্মিভাবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান চালান। এ সময় দলিল রেজিস্ট্র্রি করতে আসা ভুক্তভোগী জমি ক্রেতাদের অনেকেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমস্ত অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পান। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব রেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাস এবং দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দীনকে ভূমি ক্রেতাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ না নেয়ার জন্য নিদের্শ প্রদান করেন এবং জমি রেজিস্ট্রি করতে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা প্রকাশ্যে টানিয়ে রাখার নির্দেশ দেন।
জেলা রেজিস্ট্রি অফিসসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পৌরসভা ব্যতীত ইউনিয়ন পর্যায়ের ১ লাখ টাকা মূল্যের একটি জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে নিয়মানুযায়ী ৯ হাজার টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে স্ট্যাম্প খরচ ৩ হাজার, রেজিস্ট্রেশন ফি ২ হাজার, স্থানীয় উন্নয়ন কর ৩ হাজার এবং উৎস কর ১ হাজার টাকা। কিন্তু তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জীবননগর দলিল লেখক সিন্ডিকেটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে দলিল লেখকরা ১ লাখ টাকা মূল্যের একটি দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকার নির্ধারিত ফি ৯ হাজার টাকার স্থলে বিভিন্ন ভুয়া খাত দেখিয়ে ১৪ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন। যা সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও প্রায় ৫ হাজার টাকা বেশি। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে জমি রেজিস্ট্রিতে বিভিন্ন রেটে সাব-রেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাসকে ঘুষ দিতে হয়। দলিল মূল্যে প্রতি লাখে ৫৫০ টাকা, খারিজ কপি না থাকলে ৩ হাজার টাকা, হেবানামা দলিলে ২ হাজার টাকা, মূল রেকর্ড না থাকলে ৩০০ টাকা, তহশিলদারের কপি হলে ৫০০ টাকা, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে ৫০০০ টাকা, জমি গ্রহিতা না থাকলে ২০০ টাকা, দাখিলা না থাকলে ৩০০ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না পেলে তিনি দলিল রেজিস্ট্রি না করে অহেতুকভাবে মহুরারদের হয়রানি করে থাকেন।
একাধিক অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য সাব-রেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাসকে মোবাইলফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, প্রতি লাখে ৯ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। এরপরই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বেশকিছু দিন ধরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ পেয়েছি। তবে বর্তমানে এরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের লাগামহীন দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য গত বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানের সময় সমন্ত অভিযোগের সত্যতার প্রমাণও পেয়েছি। তবে অভিযানের সময় সাব-রেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাস, মোহরার আব্দুস সাত্তার, দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দীন ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। এ কারণে প্রথমবারের মতো তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তবে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Leave a comment