দামুড়হুদার মুন্সিপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমানোর প্রস্তুতি ॥ আটককৃতদের মধ্যে ১৮ জনের নামে মামলা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেলো এলাকার সংঘবদ্ধ ধুড় পাচারকারী দালালচক্র

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার মুন্সিপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতে পাড়ি জমানোর প্রস্তুতিকালে পুলিশের হাতে আটক শিশুসহ ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনের নামে পাসপোর্ট আইনে মামলা করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে দামুড়হুদা মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আনোয়ার হোসেন বাবু বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেন। আটককৃতদের মধ্যে শিশু পূজা ও তার মা নিলীমা ম-লকে মানবিক কারণে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে মামলা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই আব্দুল বাকী বলেছেন আটককৃতদের গতকাল রোববার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে এলাকার ধুড় পাচারকারী সংঘবদ্ধ দালালচক্র ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এলাকার সচেতন মহল বলেছেন এলাকার ধুড় পাচারকারী সংঘবদ্ধ দালালচক্রই ওই সমস্ত নিরীহ লোকজনকে ভোগা দিয়ে মাথাপিছু ৩ থেকে ৪ হাজার করে টাকা নিয়ে অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সাহস জোগায়। সে কারণে শুধুমাত্র অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি জমানো ওই সমস্ত নিরীহ লোকজনকে আটক করলেই অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার প্রবনতা বন্ধ করা অসম্ভব। আগে এলাকার চিহিৃত ধুড় পাচারকারী সংঘবদ্ধ দালালচক্রকে আটক করে তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। এছাড়া জনশ্রুতি রয়েছে নাটুদহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ ওই সংঘবদ্ধ ধুড় পাচারকারী দালালচক্রের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়ারও পরিকল্পনা করেন। পরে বিষয়টি দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করা হলে তা ভেস্তে যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যাদের মাধ্যমে আটককৃতরা অবৈধ পথে ভারতে পাড়ি জমাতো এলাকার সেই ধুড় পাচারকারী দালালচক্ররা গেলো কোথায় আর স্বপন নামের যে দালাল গোপালগঞ্জ থেকে তাদেরকে দামুড়হুদায় নিয়ে আসলো সেই বা কোথায়? বিষয়টি খতিয়ে দেখে ওই সমস্ত সংঘবদ্ধ ধুড় পাচারকারী দালালচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষে নবাগত পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টিও কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জ জেলার মুকুসদপুর উপজেলার স্বপন নামের এক ধুড় পাচারকারী ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুসহ মোট ২০ জনকে চোরাই পথে ভারতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে মাথাপছিু ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে নেয়। গতকাল শনিবার ভোরে তারা মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় থেকে বাসযোগে রওনা হয় এবং ফরিদপুর হয়ে বেলা ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার শিবনগরস্থ ডিসি ইকোপার্কে পৌঁছায়। দালাল স্বপন ওখানে তাদেরকে বসিয়ে রেখে স্থানীয় দালালদের সাথে কথা বলে। গভীর রাতে তাদেরকে মুন্সিপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিলো। ডিসি ইকোপার্কে বহিরাগত হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষদের দেখে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি স্থানীয় নাটুদহ পুলিশ ফাঁড়িকে জানায়। নাটুদহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে আটক করেন। পরে স্থানীয় দালালরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পুলিশের কাছ থেকে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়ার সময় স্থানীয়রা বিষয়টি দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদকে অবহিত করে। ওসি আবু জিহাদ তাদেরকে আটক করে থানায় পাঠানোর নির্দেশ দেয়ার পর আটককৃতদের থানায় নেয়া হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মুন্সিপুর গ্রামের খোকা ধামার ছেলে ফারুক (৪০), ঠাকুরপুর গ্রামের হাবিবুর (৩৮), পীরপুরকুল্লাহ গ্রামের ছাত্তারের ছেলে মালেক (৩৮), একই গ্রামের তেতুলের ছেলে আলী, জবেদের ছেলে ইমাদুল, হুদাপাড়ার মৃত আয়ুব আলীর ছেলে হাসিবুর (৩০), একই গ্রামের জিয়াবদ্দীনের ছেলে সাদেক (৩২) এবং জলিল মোল্লার ছেলে আশরাফ ওই ধুর পাচারকারীচক্রের সক্রিয় সদস্য। আর এদের গডফাদার হচ্ছে মুন্সিপুর গ্রামের খোকা ধামার ছেলে ফারুক। সে বিজিবির সোর্স হিসেবে এলাকায় পরিচিত। স্থানীয় ওই দালালদের মাধ্যমেই তাদেরকে ভারতে পাচার করা হচ্ছিলো।