এত তারকার পরও যে কারণে পারে না আর্জেন্টিনা

মাথাভাঙ্গা মনিটর: প্রশ্নটা অনেক দিনের। ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব তো বটেই, চাইলে টেনে নিতে পারেন ২০১৪ বিশ্বকাপ বা তার আগেও। ক্লাব ফুটবলের সেরা ফরোয়ার্ডদের দলে রেখেও কেন গোল পায় না আর্জেন্টিনা? রীতিমতো তারকাবহুল দল নামিয়েও বিরতির আগেই টেকো মাথাটা চুলকে কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। বল পায়ে ঐতিহ্যগতভাবেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলা দলটি কেন ওপেন প্লে থেকে এ বছর গোল করতে পারেনি? দলের সামর্থ্য নিয়ে কারওরই সন্দেহ নেই, থাকার কথাও নয়। স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের নামগুলোই প্রতিপক্ষ শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিতে যথেষ্ট। লিওনেল মেসি ছাড়াও দলে আছেন পাওলো দিবালা, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, মাউরো ইকার্দির মতো ইউরোপ-সেরা ফরোয়ার্ড। এই মুহূর্তে দলে না থাকলেও গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরোর মতো তারকারাও আর্জেন্টিনারই। নিজ নিজ লিগে এই মরসুমে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডদের গোলসংখ্যায় চোখ বোলানো যাক। লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা) ৭ ম্যাচে ১১ গোল, পাওলো দিবালা (জুভেন্টাস) ৭ ম্যাচে ১০ গোল, সার্জিও আগুয়েরো (ম্যানচেস্টার সিটি) ৬ ম্যাচে ৬ গোল, মাউরো ইকার্দি (ইন্টার মিলান) ৭ ম্যাচে ৬ গোল এবং দারিও বেনেদেত্তো (বোকা জুনিয়র্স) ৫ ম্যাচে ৫ গোল।

ডি-বক্স বা তার বাইরে থেকে গোল করতে হলে প্রথম বল নিয়ে সেখানে পৌঁছুতে হয়। ফরোয়ার্ডদের পায়ে বল পৌঁছুনোর আগে নিশ্চিত করতে হয় তারা গোল করার মতো জায়গায় আছেন। খোলাখুলি করে বললে, আক্রমণটা ‘বানিয়ে’ নিতে হয়। বার্সেলোনায় মেসির পেছনে যেই ভূমিকা নেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, আগুয়েরোর পেছনে ডেভিড সিলভা বা ইকার্দির পেছনে মিরালেম পিয়ানিচ। আলবিসেলেস্তেদের কি সে রকম মাঝমাঠ রয়েছে? নেই। আর্জেন্টিনার জার্সিতে সর্বশেষ সৃষ্টিশীল প্লে-মেকার ছিলেন হুয়ান রোমান রিকেলমে। ডিয়েগো ম্যারাডোনার বদৌলতে যিনি দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন, ২০১০ বিশ্বকাপে ব্যর্থ হয়েছিলো দল। আলেসান্দ্রো সাবেলার ২০১৪ বিশ্বকাপ অভিযানে ফাইনালে গেলেও ওপেন প্লের দুর্বলতা দলকে ভুগিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই। বিস্ময়কর, দুঃখজনক, লজ্জাকর—যা-ই বলা হোক না কেন, ১২ বছরে ৩টি বিশ্বকাপ অভিযানেও ফুটবল-প্রতিভার সূতিকাগারে একজন ভালো প্লে-মেকার তৈরি হয়নি। এমনটা হওয়ার কারণ কী? ফরোয়ার্ডরা খেলাটার নায়ক। তাই প্রতিশ্রুতিশীল মিডফিল্ডাররা ফরোয়ার্ড হওয়ার নেশায় আর্জেন্টিনার ফুটবলের বারোটা বাজিয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মাঝমাঠের খেলোয়াড় ছিলেন হাভিয়ের পাস্তোরে, এজেকিয়েল লাভেজ্জিরা। কিন্তু এঁরাও ফরোয়ার্ড হওয়ার মিছিলে যোগ দেয়ায় আর্জেন্টিনা দলের অবস্থা হয়েছে ফুটবলের শুরুর দিককার দলগুলোর মতো। সাতজন ফরোয়ার্ড খেলানোর চল থাকলে নিঃসন্দেহে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিততো। হাভিয়ের মাচেরানোর মতো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পুরোদস্তুর ডিফেন্ডার বনে যাওয়ায় মিডফিল্ডের শূন্যতা আরও বড় করে চোখে পড়ছে। এই সমস্যার সঙ্গে অনেকটা মিলে যায় আগের আমলের সেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্কটের সঙ্গে। যেখানে সবাই শচীন টেন্ডুলকার হতে চায়। ফলে অন্য ধরনের ক্রিকেটার, ভালো পেসার বা বোলার খুঁজে পেতে ঘাম ঝরছিলো ভারতের। আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক ফুটবলে তাই সমস্যাটাই ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ভালো মানের মিডফিল্ডার বা হোল্ডিং মিডফিল্ডার উঠে আসছে না। সমস্যাটা এখানেই। আপাতত সাম্পাওলির দুশ্চিন্তা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করা। সে জন্য মেসি, ইকার্দি, দিবালার চেয়েও এভার বানেগা, লুকাস বিলিয়া বা ফার্নান্দো গ্যাগোদের ভালো খেলা জরুরি। মেসি-ডি মারিয়ার সেরাটা বের করতে তাঁদের পায়ে বল জোগানোটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।