স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুরের পান চাষিরা ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আশায় এ বছরও পানচাষ করেছেন চাষিরা। তবে তাদের সে আশায় ছাই পড়তে বসেছে। পানের গোড়া ও কাণ্ড পচা এবং পান পাতায় দাগ রোগ পান চাষিদের হতাশায় ফেলেছে।
মেহেরপুর জেলা সদরের পিরোজপুর ইউনিয়নের নূরপুর পানচাষের একটি উল্লেখযোগ্য গ্রাম। এ গ্রামের চাষিরা বাপ-দাদার আমল থেকে পানচাষ করে আসছেন। অর্ধশত বছরের পুরানো পানের বরজ এ গ্রামের মাঠে রয়েছে। নূরপুর গ্রামের মাঠে ওই গ্রামের নাসিরউদ্দিন, জালালউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর হোসেন তিন বিঘা করে, তাছিরউদ্দিন ও আক্কাস আলীর দুই বিঘা করে এবং একই গ্রামের আরমান আলী এক বিঘা জমিতে পানচাষ করেছেন। চলতি বছর নূরপুর ও পিরোজপুরের মাঠে প্রায় ৩শ বিঘা জমিতে পান চাষ হয়েছে।
২শ বছর আগে যখন এলাকায় বারুইরা বাস করতেন তখন থেকেই এ এলাকায় পানচাষ হচ্ছে। তবে আশির দশকের পর থেকে ধীরে ধীরে পানচাষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পান চাষ লাভজনক হওয়ায় নূরপুরবাসীর আয়ের প্রধান উত্স হয়ে উঠেছে পান। তবে এ সময়ে তাদের পানের গোড়া ও কাণ্ড পচা এবং পান পাতায় দাগ রোগ লেগেছে। গত বছর একই ধরনের রোগে চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অধিকাংশ চাষিই এ বছর নব উদ্যমে পান চাষ করেছে। কিন্তু তাদের সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে।
নূরপুর গ্রামের পানচাষি তাছিরউদ্দিন জানান, পান ১২ মাসী ফসল। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পানচাষের জন্য জমিতে পিলে তৈরি করতে হয়। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পরিচর্যা করতে হয়। জমিতে জৈব সার খৈল ও মাটি দিতে হয়। ১২ মাসী ফসল পান তাই ১২ মাসই পরিচর্যা করতে হয়। একবার পান চাষ করতে বর্তমান বাজার দরে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর বছরের পর বছর চলে ওই বরজ। প্রতিবছর পানে জৈব সার খৈল-মাটি দিতে ও পরিচর্যা করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ। ভালো পান হলে প্রতি বিঘা জমি থেকে বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায়। গত বছরের আগের বছর এ এলাকার চাষিদের কমবেশি লাভ হয়েছিল। গত বছর অধিকাংশ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা তিনটি রোগ নির্ণয় করেছি। তার প্রতিকারে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দ্রুত এলাকাভিত্তিক চাষিদের নিয়ে উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আরো পরামর্শ দেবো।
দাম পতনে চাষিরা দিশেহারা: পুরো বাজার জুড়েই রয়েছে পান। ছোট, বড়, মাঝারি। দেখে মনে হয় প্রতিযোগিতার জন্য পানের পসরা সাজানো হয়েছে। তবুও হাসি নেই তাদের মুখে। দাম পতনে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন চাষিরা।
পানের রোগবালাই, শ্রমিকের মজুরি, সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ার কারণে পানের উত্পাদন খরচ বাড়ছে। পান বিক্রির টাকা দিয়ে উত্পাদন খরচ মিটিয়ে তেমন লাভ করতে পারছেন না চাষিরা। আবার অনেকে এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তি দিয়েই দিশেহারা। ভোলার বৃহত্তম পান বাজার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের দালালপুর বাজারের পান চাষিরা এ সব কথা জানান।