ব্যাটারিচালিত বাহন বন্ধের বদলে উপযোগী করাই ভালো

রাজধানীতে এখনও দুলদুলে টানা কিছু টমটম আছে, তার মানে এই নয় যে, এখনও ঘোড়া ঘোড়ার গাড়িতেই আটকে থাকতে হবে। রাজধানীতে যেটা রয়েছে সেটা ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে খানেকটা গায়ের জোরেই জিইয়ে রাখা। যেমন কোলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র নিউ মার্কেটে এখনও মানুষে টানা দু চাকার ‘টানা’ রয়েছে। ওটাই নিশ্চয় কোলকাতাবাসীর বাহন নয়!
কালের বিবর্তনে বদলে যাওয়া সব কিছুর সাথে মানুষের বদলাতে হয়েছে, হচ্ছে। এক সময়ের পালকি এখন শুধু অচলই নয়, প্রজন্মের কাছে হাস্যকরও বটে। যেমন জুতো আবিষ্কারের আগে রাস্তার কাদা মাটিই ঢেকে দেয়ার প্রস্তাবনা ছিলো, তেমনই আজকের রকেট আসার আগে কবি ভেড়ার গাড়িতে চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিরামহীন স্বপ্ন দেখা, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জোর প্রতিযোগিতায় গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়িকে সেকেলে করেই প্রয়োজন মেটাতে সামনে এসেছে মোটরচালিত নানা নামের তিনচাকার বাহন। এই বাহন সব সড়কে যেমন নিরাপদ নয়, তেমনই বাহনের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় অংশও প্রযুক্তিসম্মত নয়। ফলে সড়কে বেড়ে চলেছে ঝুঁকি। সে কারণেই ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের তরফে ব্যাটারিচালিত এসব ভ্যান-রিকশা শহরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবশ্য নিষিদ্ধ করা হলেও কেমন উপযোগী করলে তা সড়কে চালানোর অনুমতি মিলবে তেমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। সে কারণে ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালকদের তরফে বলা হয়েছে, আমরা কাজ করে সংসারের অভাব ঘোচাচ্ছিলাম। ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালানো বন্ধ করলে সংসার চলবে কীভাবে?
নতুন দিনের নতুন সকালকে স্ব^াগত জানানোই যখন নিয়তি, তখন নতুনে নাক সিটকানোর বদলে ত্রুটি-বিচ্যুতি শনাক্ত করে দ্রুত উপযোগী করে তোলাই কি কল্যাণকর নয়? যে মানুষ প্রতিকূল পরিবেশকেও অনুকূলে নিতে পারে যতো দ্রুত, তার সামনে সম্ভাবনার দ্বারতো ততো দ্রুতই উন্মোচিত হয়। গাছের গুড়ি থেকে গোলচাকার উদ্ভাবক যেমন ইতিহাস, তেমনই পালকি, গরু ঘোড়ার গাড়িও। এসবকে ইতিহাসের গহ্বরে ঠেলে যেসব এসেছে নতুন হয়ে, এসবও যে একদিন সময়ের ¯্রােতে পেছনে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। প্যাডেল মেরে চালানো ভ্যান-রিকশা চালানো মানে অমানবিক পরিশ্রম। মানুষ শক্তি খাটিয়ে প্যাডেল চেপে যে রিকশা-ভ্যান চালাতেন, প্রযুক্তির বদৌলতে তাতে বৈদ্যুতিক শক্তি যুক্ত করে বদলে দেয়া হয়েছে শক্তি খরচের চিত্র। তবে ব্যাটারির শক্তিতে ওই বাহন চালাতে গিয়ে চালকের যে দক্ষতা দরকার তাতে যেমন ঘাটতি রয়েছে যথেষ্ট, তেমনই গতি বাড়ানো হলেও নিরাপদ করার মতো পরিপূর্ণ প্রযুক্তির ছোঁয়া ওই যানে অনুপস্থিত বলেই বেড়েছে ঝুঁকি। চালকের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যানের ত্রুটি সারিয়ে উপযোগী করতে পারলে দোষের কি?
পুরোনোকে আখড়ে পিছিয়ে পড়ার বদলে নতুনকে স্বাগত জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই কালের ধারা। সময়ের সিঁড়ি মাড়িয়ে সময় আসে বলেই নতুনকে উপযোগী করতে হয়। আর এজন্য দরকার দূরদর্শী নির্দেশনা। মোটরচালিত রিকশা বাতিল করার চেয়ে তা উপযোগী করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করতে পারলে উপকৃত হবে সমাজ।