স্টাফ রিপোর্টার: দফায় দফায় চালের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। চালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটি জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য মজুদ পলিসি প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে তারা অতিরিক্ত মজুদ বন্ধে নজরদারি কঠোর করতে বলেছে। যদিও আমদানি শুল্ক ‘সময় মতো’ প্রত্যাহার না করে ধাপে ধাপে করায় চালের দাম বাড়ার বড় কারণ হিসেবে দেখছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদ। কমিটির সদস্য খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং বেগম শিরিন নাঈমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন সামনে রেখে চালের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর- উল্লেখ করে কমিটির দুইজন সদস্য এজন্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতাকেও দায়ী করেছেন। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম চালের দাম বৃদ্ধির কারণগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলে এক সদস্য বলেন, মন্ত্রণালয় কী উদ্যোগ নিয়েছে বা নিচ্ছে সেটা নয়, তারা দেখতে চান চালের দাম কমেছে। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ১৫ জুন সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও চালের দাম বৃদ্ধিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন ফজলে নূর তাপস। তাপস বলেছিলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ে চরম ব্যর্থতা এবং গাফিলতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সরকার নতুন কিছু করছে না। ৪৫ বছর ধরে যা করা হয়েছে, তা-ই করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয়, সমস্যা মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি আছে। কিন্তু যখন কোনো দুর্যোগ আসে, তখন সবকিছুই ভেঙে পড়ে। হাওরের বন্যা মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের মজুদ কোথায়, সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছিলেন, মনে হয় দুর্যোগ মোকাবেলায় মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রস্তুতিই ছিল না। কমিটির সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদও চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই বৈঠকে কমিটির আরেক সদস্য নুরুল হক বলেছিলেন, তার ধারণা খাদ্য মন্ত্রণালয়ে বর্তমানে লেজেগোবরে অবস্থা। কমিটির কার্যপত্রে চালের দাম বৃদ্ধির সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হয়, আমদানি শুল্ক সময় মতো প্রত্যাহার না করে দফায় দফায় প্রত্যাহার করায় রফতানিকারক ভারতও দফায় দফায় চালের মূল্য বৃদ্ধি করে। ফলে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও বাজারমূল্য কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বৈঠকে বলা হয়, এপ্রিলের শুরুতে আগাম বন্যায় হাওরে ফসলহানি এবং মজুদ তলানিতে নেমে আসায় বাজার সামলাতে ২০ জুন আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। এর আগে বিদেশ থেকে চাল আনতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সাথে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হতো। জুনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পাশপাশি রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়। পরে আগস্টে আরেক দফা কমিয়ে ২ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়।
মার্চে মোটা চালের গড় বাজার দর ছিলো ৩৪ দশমিক ০৯ টাকা। এপ্রিলে ছিলো ৩৪ দশমিক ৭৯ টাকা। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে হাওর অঞ্চলের ছয় জেলায় অকাল বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয় এবং মোটা চালের দাম বাড়তে থাকে। মে মাসে দাম হয় ৩৮ দশমিক ০৯ টাকা। ওই সময় আমদানির ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ শুল্ক থাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল আমদানি হয়নি। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মাত্র এক দশমিক ৩৩ লাখ টন চাল বেসরকারিভাবে আমদানি হয়। ফলে এ সময় চালের জোগান প্রয়োজনমাফিক বাড়েনি।
বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য শিরিন নাঈম বলেন, সংসদীয় কমিটি চালের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছে। কমিটি বলেছে, সব সমস্যার সমাধান করে চালের দাম জনগণের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। বৈঠকে খাদ্য অধিদফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়।