প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন দুর্গোৎসব

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এর আগে ম-পগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা শুরু হয়। এরপর যথাক্রমে মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী ও মহানবমীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার-হাজার নারী-পুরুষ ধর্মীয় নানা আচারাদি ও পূজা-অর্চনার মাধ্যমে দুর্গাদেবীর করুণা প্রার্থনা করেন।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার নৌকায় চড়ে মর্তলোকে (পৃথিবী) আসেন। স্বর্গালোকে বিদায় নেন ঘোটক (ঘোড়ায়) চড়ে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বড় বাজার পূজামণ্ডপ, দাসপাড়া সনাতন মন্দির, কেদারগঞ্জ মালোপাড়া দুর্গামন্দির, তালতলা সার্বজনীন পূজা মন্দির, তালতলা ষষ্ঠিতলাপাড়া দুর্গা মন্দির, বেলগাছি সার্বজনীন পূজামণ্ডপ, কুলচারা দুর্গা মন্দির, দৌলাতদিয়াড় শ্রী শ্রী বারোয়ারী দুর্গা মন্দির ও দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব। গতকাল দশমীর দিনে পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হয় সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে। পরে বিকেলে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন দেয়া হয়।
সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ এলাকায় সকল স্থানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। সকলের বুকে ছিলো তাই বিসর্জনের বেদনা। প্রতিধ্বনিত হয় মা তুমি আবার এসো, উল্লেখ্য এবার সরোজগঞ্জ এলাকায় ৭ পূজামণ্ডপ তৈরি হয়। নজিরবিহীন পুলিশি প্রহরার মাধ্যমে পূজা অর্চনা সম্পন্ন হয়, কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বোয়ালিয়া সিন্দুরিয়া, আলিয়ারপুর, ধুতুরহাট প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় নবগঙ্গা নদীতে সরোজগঞ্জ কাচারিপাড়া, গড়াইটুপি পালপাড়া, গড়াইটুপি মাঝেরপাড়া ও তেঘরির প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় চিত্রা নদীতে।
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুন্সিগঞ্জ এলাকার বেশ কয়েকটি প্রতিমা মুন্সিগঞ্জ পশুহাট সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা নদীতে সন্ধ্যায় বিসর্জন দেয়া হয় এবং প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে পশুহাট চত্বরে আড়ং মেলা বসে।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, টাপুর টুপুর বৃষ্টির মধ্যেই কুমার নদের শীর্ণবক্ষে গতকাল শনিবার বিজয়া দশমীতে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার সবগুলো প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বিসর্জন উপলক্ষে কুমার নদের তীরে ভক্তদের ঢল নামে। সন্ধ্যার পর পর বিসর্জন দেয়া হয় সবকটি প্রতিমা। দেবী বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের পাঁচ দিনব্যাপী সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। বিসর্জনের মধ্যদিয়ে মা দুর্গা তার সন্তান কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ কৈলাশে স্বামীর গৃহে ফিরে গেলেন। তার আগে মহালয়ায় তিনি মর্ত্যে পিতৃগৃহে আগমন করেন।
গত শুক্রবার ভোর রাত থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টির একতারা বাদন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মণ্ডপগুলো ঢাকঢোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনী ও ধুপের ধোঁয়া, আর ভক্তিমন্ত্রে মুখর হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ঢল নামে। শিশু, কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। মহানবমীর এদিন ষোড়শোপচারে দেবীর বন্দনা ও মহাস্নান-যজ্ঞ, আর সন্ধ্যায় আরতি বন্দনায় আনন্দময়ীর অর্চনা করছেন ভক্তরা। ফুল, ফল, জলসহ নানা উপাচারে দুর্গা দেবীর চরণে অঞ্জলি প্রদান করেছেন। বিকেল থেকে শুরু উপচেপড়া ভিড় ছিলো গভীর রাত পর্যন্ত। নবমী বিহিত পূজা, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতিসহ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গতকাল শনিবার সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী বিদায়ের সুর বেজে ওঠে। সকালে দশমীবিহিত পূজার পর করা হয় দর্পণ বিসর্জন। মা দুর্গার শ্রীচরণে অঞ্জলি ও মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন। দেবী বিদায়ের আগে দুপুর ১২টায় মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা (মা-বোনেরা) সিঁদুর খেলায় অংশ নেন।
এবারে পূজামণ্ডপগুলিতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যতেষ্ঠ তৎপর ছিলো। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সূর্যাস্তের পর পরই সব পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের সময় বেঁধে দিয়েছিলো। বিসর্জনস্থল কুমার তীরেও পর্যাপ্ত পুলিশের উপস্থিতি ছিলো। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ালী লীগের সভাপতি হাসান কাদির গনু, সহকারী পুলিশ সুপার আবুল মোমেন, থানা অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লুতফুল কবীরসহ পৌরসভার কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম স্বপন, গাফফার, মতিয়ার রহমান ফাুরক, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
দুপুর পার হতেই সব পূজামণ্ডপ ঘিরে শুরু হয় শুধুই বিষাদের ছায়াপাত। বিদায়ের সুর বেজে ওঠে মণ্ডপগুলোতে। বিষাদের ছায়া ঘনায় প্রতিটি ভক্তের হৃদয়েও। দেবীকে বিদায় দিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শেষ মুহূর্তের পূজা-অর্চনা সম্পন্ন করেন। সন্ধ্যার আগেই শহরের সকল প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে শোভাযাত্রাসহ কুমার নদের তীরে নিয়ে যাওয়া হয়। শঙ্খ, ঢাক-ঢোল, কাঁসা, জুরিসহ নানা বাদ্যবাজনায় মুখরিত হয়ে ওঠে কুমার নদের তীর। বিসর্জনস্থল সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সন্ধ্যার অস্তরাগে কুমার নদের নিস্তরঙ্গ জলে প্রতিমা বিসর্জন শেষে বিসর্জনের বেদনা নিয়ে ভক্তসকল ঘরে ফেরেন।
পূজা উৎযাপন কমিটির নেতা ডাক্তার অমল কুমার বিশ্বাস বলেন, মায়ের কাছে সবাই প্রার্থনা করেছি, মা যেনো আমাদের মনের ভেতর বাস করা অসুরকে বধ করে সেখানে সুরশক্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, দুর্গোৎসব শেষে মা চলে গেলেও যেনো তার আশীর্বাদ সব সময় আমাদের ওপর থাকে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলায় ২২ পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন শেষে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। ধুমধামের সাথে উপজেলার ২২ পূজা মণ্ডপের প্রতিমাকে বিসর্জন দেয়া হয়। এর পূর্বে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে শহর ও গ্রাম প্রদর্শন করা হয়। জানা যায়, উপজেলার শহরের শারদীয় শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, দৌলৎগঞ্জ সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পূজাম-প, মনোহরপুর পালপাড়া পূজামণ্ডপ, মনোহরপুর আদিবাসী পূজামণ্ডপ, সেনেরহুদা দাসপাড়া পূজামণ্ডপ, শিয়ালমারী খিতিশ মণ্ডল সার্বজনীন পূজামণ্ডপ, সিংনগর হালদারপাড়া পূজামণ্ডপ, কেডিকে ইউনিয়নে শ্রী শ্রী অন্নপূর্ণা পূজামণ্ডপ, দেহাটি পালপাড়া পূজাম-প, কাশিপুর হালদারপাড়া পূজাম-প, সুটিয়া পশ্চিমপাড়া মহাদেব পূজাম-প, পাথিলা নারকেল বাগান পূজাম-প, শাখারিয়া দাসপাড়া শিবকালী পূজাম-প, শাখারিয়া আদিবাসী শ্রী শ্রী পূজাম-প, আন্দুলবাড়িয়া জুগিপাড়া পূজাম-প, নিশ্চিন্তপুর মালোপাড়া পূজাম-প, বাজদিয়া দাসপাড়া পূজাম-প, মাধবপুর শ্রী শ্রী শারদীয়া পূজাম-প, বকু-িয়া সার্বজনীন দুর্গা পূজাম-প, রায়পুর সর্দ্দারপাড়াকালি মন্দির পূজাম-প ও রায়পুর বারুইপাড়া সার্বজনীন পূজাম-পে এবার জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন শেষে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের মুজিবনগর সবকটি প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহত ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। সন্ধ্যায় বাগোয়ান ইউনিয়নে দুটি, মোনাখালী ইউনিয়নে দুটি, দারিয়াপুর ইউনিয়নে একটি ও মহাজনপুর ইউনিয়নে দুটি মোট সাতটি মন্দিরের প্রতিমা শান্তিপূর্নভাবে ভৌরব নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়েছে।
ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রতিমা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা, সাধুহাটি, সাগান্না ইউনিয়নের নবগঙ্গা নদীতে দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহত দুর্গোৎসব। গতকাল বিকেলে নবগঙ্গা নদীর ওপর ব্রিজের পাশে দেবী দুর্গার বির্সজন করা হয়েছে। সদর উপজেলার পোতাহাটি, বৈডাঙ্গা, আসান নগর, গ্রামে পূজাম-পে পূজা উৎযাপন করা হয়। পূজাকে ঘিরে এলাকার সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে একটা আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। বৈডাঙ্গার পাল পাড়া এবং বাবু পাড়াই এই পূজায় ব্যাপক মানুষের ভিড় জমে। পোতাহাটি ও আনান নগর, এনাইতপুর পূজা একই সাথে পাশাপাশি বির্সজন করা হয়েছে। নদীর দুপারের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে এই বিসর্জনের দৃশ্য দেখেন।

Leave a comment