দালালরা সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে নেয় বেসরকারি হাসপাতালে

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের সামনে ও আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আর এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত দালালরা সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে নিচ্ছে। তবে ভাগিয়ে নেয়া রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আর এ ব্যবসায় ভাগাভাগির এক অংশ নিয়মিত পাওয়ায় স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন নিরব থাকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের নিয়ে বাণিজ্য করে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও দালালরা লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। রোগী ভাগিয়ে নিয়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে নানা কলা কৌশলে টাকা আদায় করেন। নামমাত্র সেবা প্রদান করে হাতিয়ে নেয়া হয় বড় অঙ্কের টাকা। অযথা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে এবং ভর্তি থেকে শুরু করে রোগী রিলিজের দিন পর্যন্ত একাধিক বিষয়ের ওপর বিল তৈরি করা হয়। কেউ কেউ যদি টাকা পরিশোধ করতে না পারেন তবে রোগী আটকে রেখে হয়রানি করা হয়।

এদিকে সরকারি হাসপাতালে এক্সরে, সিটিস্ক্যান, এমআরআই, আলট্রসনোগ্রাম, ইসিজিসহ সব পরীক্ষা নিরীক্ষাই আছে। কিন্তু শুধু কমিশন খাওয়ার লোভে এক শ্রেণির ডাক্তাররা রোগীদের সরকারি হাসপাতালের আশপাশের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে পাঠান।

সরকারি হাসপাতালের আশপাশে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সড়কের দু পাশে শুধু হাসপাতাল আর হাসপাতাল। শ শ রোগী আর দালালে গিজগিজ করে ওই এলাকা। এসব সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দিকে দৃষ্টি থাকে ওই এলাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর। এজন্য নিয়োগ করা হয়েছে দালাল। রোগী ধরার ফাঁদ পেতে বসে থাকে দালালরা। এসব এলাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর নিজস্ব মার্কেটিং প্রতিনিধি আছে। যারা বেতন হিসেবে আবার কমিশন হিসেবে কাজ করেন। তারাই মূলত রোগী সংগ্রহের কাজ করেন। দালালরা সকাল থেকেই সরকারি হাসপাতালে শুরু করেন জটলা। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এক দুই জন নয়। অন্তত কয়েকশ প্রতিনিধি। দালালরা রোগী ভাগানোর প্রতিনিধি নামে পরিচিত। রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেন তারা। লোভনীয় অফার আর হয়রানি। চলে টানা হেঁচড়াও। অসহায় রোগী আর তাদের অভিভাবকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ফাঁদে আটকা পড়েন। হাসপাতালে ভর্তি করার পর শুরু হয় অন্যরকম হালচাল। টাকা আদায়ের যতো কলা-কৌশল। চিকিৎসার বালাই নাই। উল্টো আদায় করা হয় বিভিন্ন অজুহাতে বড় অঙ্কের টাকা। আর এই চিকিৎসা সেবার ভার বহন করতে গিয়ে অনেকেই হারিয়েছেন মূল্যবান অনেক কিছু। এসব অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালালেও তাদের অসাধু কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে স্থানীয় প্রভাবশালীর এসব সিন্ডিকেটের অবৈধ চিকিত্সা বাণিজ্য চলছেই। এ সকল বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশের কোনো অনুমোদন নেই। আর এগুলোর তদারকি করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) এর অধীনে একটি ভিজিলেন্স টিম রয়েছে। এই টিমের সাথে ওই সমস্ত দালাল নির্ভর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের যোগাযোগ রয়েছে। কর্মকর্তারাও পাচ্ছেন নিয়মিত উৎকোচ। এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে ওই ভিজিলেন্স টিমের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ।

শুধু তাই নয়, এসব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সেবার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চড়া ফি দিয়েও এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এছাড়া এদের ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে অনেক অনিয়ম। নেই নিজস্ব চিকিৎসক। আবার চিকিৎসক না হয়েও ভুয়া সনদ তৈরি করে এসব হাসপাতালে-ক্লিনিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন অনেকে। বিভিন্ন সময়ে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। দালালদের মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার আশায় এসব প্রতিষ্ঠানে এলেও রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি কমে না; বরং বাড়ে। সরকারি হাসপাতালগুলোর পরিচালকরা জানান, আমাদের মুখ খোলার মতো কোনো সুযোগ নেই। কারণ রোগী ভাগানোর প্রতিনিধিরা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কাজ করে।