ঝিনাইদহে লোডশেডিং ভাঙা রাস্তা আর জলাবদ্ধতায় ফুঁসছে মানুষ

গিয়াস উদ্দীন সেতু: মানুষের ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং, সড়ক মহাসড়ক ও পাড়া মহল্লার খারাপ রাস্তা আর শহরের জলাবদ্ধতায় ফুঁসে উঠেছে মানুষ। কোনো প্রতিকার মিলছে না কোথাও। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রশাসন আর জনপ্রতিনিধিদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ভোটারদের কাছ থেকে ভোট নিয়ে তাদের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন তারা। সরকারি কর্মকর্তারাও গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলেছেন। এতে সমাজে হা-হুতাশ ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘশ্বাস আর কষ্টের আর্তনাদ দিনকে দিন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে বিষিয়ে তুলেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের আওতাধীন শহরের রাস্তাগুলো খানাখোন্দকে ভরে গেছে। ধীর্ঘদিন ধরেই রাস্তাগুলো মেরামতের অভাবে পড়ে আছে। আবার নির্মাণের পর অল্পদিনেও রাস্তাগুলো নষ্ট হচ্ছে। দু ঈদের আগে সড়ক মন্ত্রণালয়ের হুংকারে ভাঙাচোরা রাস্তা দায়সারাভাবে মেরামত করে প্রচার করা হয় ‘কোথাও কোনো রাস্তার বেহাল অবস্থা নেই।’ কিন্তু বাস্তব চিত্র তার উল্টো। শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, হাসান ক্লিনিকের সামনে, মুজিব চত্বর, তাসলিমা ক্লিনিকের সামনে, ডাইভারশান রোড, পবহাটী কলার বাজার থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, সরকারি কেসি কলেজের সামনের সড়ক চলাচলের অযোগ্য। হামদহ থেকে যশোর পর্যন্ত রাস্তায় চলাচলের মতো অবস্থা নেই। প্রকল্পের টাকা ফেরৎ গেলেও সওজের এ সব রাস্তা মেরামত করা হয়নি বলে অভিযোগ। একইভাবে ঝিনাইদহ পৌরসভার পাড়া মহল্লার রাস্তাঘাটগুলোর অবস্থাও নাজুক। মানুষ চলাচল করতে পারছে না। একটু বৃষ্ঠি হলেই কোনো কোনো রাস্তার ওপর হাটু পানি জমে যায়। যেন এর কোনো প্রতিকার নেই। পৌরসভার প্রায় সব রাস্তা ভেঙে চুরে গেছে। পৌর ট্যাক্স ও কর দিয়ে বসবাসকারী নাগরিকরা রাস্তা ও জলাবদ্ধতার কারণে যেন হাফিয়ে উঠেছেন। একইভাবে শহরের ড্রেনেজ অবস্থাও শোচনীয়। এখনো অনেক পাড়া মহল্লার মাঠ ও ড্রেনে জলাবদ্ধতা রয়েছে। পৌর নাগরিকদের দুর্বিসহ জীবন দেখার কেউ নেই। জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন নীরব। কারো যেন কোনো মাথা ব্যাথা নেই। পৌরসভার ড্রেনগুলো রয়েছে অকেজো। বদ্ধ পানিতে মশা-মাছি বসবাস করছে। ড্রেনে জমে থাকা পচা পানির গন্ধে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন করার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বছলেন, নতুন ড্রেনের সাথে রাস্তা হওয়ার পর অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এদিকে সবচে বেশি ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিদ্যুত সরবরাহ নিয়ে। দিনে রাতে একাধিকবার লোডশেডিং করা হচ্ছে। এতে গ্রামাঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার ১০ ঘণ্টাই বিদ্যুত থাকছে না। এমনও দিন আছে শহরে ১০-১৫ দফা লোডশেডিং হচ্ছে। শহরে ২-১ ঘণ্টা করে লোডসেডিং করা হচ্ছে বলে দাবি করেন বিদ্যু বিভাগ। তবে বাস্তবে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অসহনীয়।
এদিকে কারীগরি ত্রুটি, জরাজীর্ণ লাইন, অবৈধ সংযোগ, নি¤œমানের ট্রান্সমিটার, ডিস ও ইন্টারনেটের অবৈধ তারের কারণে কারীগরি ত্রুটি বাড়ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া জনবলের অভাবে সেবার মান কমে যাচ্ছে। ঝিনাইদহ বিদ্যুত বিভাগে পদ আছে ১০৬টি, কিন্তু কর্মরত মাত্র ৭৫ জন।
ঝিনাইদহ বিদ্যুত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পরিতোষ চন্দ্র সরকার জানান, ঝিনাইদহ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ ৪০-৪৫ মেগাওয়াট। এই চাহিদা আবার পল্লী বিদ্যুত সমিতির সাথে ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ঘন ঘন লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, চাহিদা বাড়াতে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে জেলা প্রশাসক চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাড়ানোর কথা বলেছেন। অবৈধ ইজিবাইকের চার্জার কারখানার কারণে সমস্যা আরো বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
ঝিনাইদহের ভাঙাচোরা সড়ক নিয়ে সওজের এসডি আমজাদ হোসেন বলেন, বর্ষা মরসুম শেষ হলেই রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বর থেকে মুজিব চত্বর পর্যন্ত রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। শহরের চাকলাপাড়া থেকে হরিণাকু-ু ভায়া ভালকি বাজার রাস্তা ৪৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।
পৌরসভার রাস্তা ও জলাবদ্ধতা নিয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, জলাবদ্ধতার মূল কারণ জচ্ছে পানি বের হতে না পারা। ড্রেনগুলোর লেভেল না থাকায় আগে নির্মিত ড্রেন কোনো কাজে আসছে না। বিদেশি অর্থায়নে বড় ড্রেন নির্মাণ কাজ শেষ হলে সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, শীত মরসুমে রাস্তার কাজ শুরু হবে। সরকারি বরাদ্দ আসলে পাড়া মহল্লার রাস্তাও মেরামত করা হবে। তখন আর চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হবে না।

Leave a comment