আলমডাঙ্গা ব্যুরো: ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে গেলেন আলমডাঙ্গার প্রাক্তন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহান। গত ২০১৬ সালের ২৮ মে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আজাদ জাহান যোগদান করেছিলেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি পদোন্নতিসহ বদলিপূর্বক কুষ্টিয়ায় সহকারী জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেছেন। মোট প্রায় ১ বছর সোয়া ৪ মাসে তিনি ১২৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। ২৪৭ মামলা দায়ের করেছেন। জরিমানা আদায় করেছেন ২ লাখ ১ হাজার ৫৫৫ টাকা। কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেছেন ১৫৪ জনকে। যোগদানের পর ২০১৬ সালের ৬ মাসে তিনি ৫৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। মামলা দায়ের করেছেন ১০৪টি , কারাদ-াদেশ প্রদান করেছেন ৬২ জনকে, জরিমানা আদায় করেছেন ৭৯ হাজার ৭৫০ টাকা। ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ বছর ৩ মাস ১২দিনে তিনি ৬৭ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। মামলা দায়ের করেছেন ১ শ ৪৩টি , কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেছেন ৯২ জনকে, জরিমানা আদায় করেছেন ১ লাখ ২১ হাজার ৮ শ টাকা। আজাদ জাহানের থেকে বেশিদিন দায়িত্ব পালন সত্বেও ইতোপূর্বে আলমডাঙ্গা উপজেলার আর কোন নির্বাহি অফিসার এত বেশি সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নি। এ ক্ষেত্রে তিনি অন্যন্যতা সৃষ্টি করে গেছেন বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।
এছাড়াও তিনি আলমডাঙ্গার পরাক্রমনশালি ইভটিজার ও বখাটেদের নিকট মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন। তার যোগদানের সপ্তা পার হতে না হতেই নিজের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের জানান দিতে শুরু করেন। যোগদানের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি এলাকার ইভটিজার আর বখাটেদের নিকট মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেন। পূর্বে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইভটিজারদের অভয়ারণ্য ছিল। বিষয়টি তিনি যোগদানমাত্রই বুঝতে পারেন। ইভটিজার আর মাদকসেবী নিজে তাড়িয়ে ধরে ধরে ১সপ্তার মধ্যে কয়েকটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে ফেলেন। এছাড়া শহরের মোড়ে মোড়ে, স্কুল-কলেজের মোড়ে অবস্থান নেওয়া উত্ত্যক্তকারিদের ধরতে মোটরসাইকেল অভিযান শুরু করেন। বখাটেদের ধরতে তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের রাস্তার মোড়ে মোড়ে তিনি মোটর সাইকেল নিয়ে ওত পেতে থাকেন – এমন সংবাদ শহরে চাউর হয়। বিদ্যালয়ের মেয়েদের নিকট এখন তার মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে দেন। ফলে পাল্টে যায় আলমডাঙ্গার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকার চিত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশের মোড়ে মোড়ে ইয়ারফোন কানে গুজে মোবাইলফোনে গান শোনা অবস্থায় মোটর সাইকেল নিয়ে কোন বখাটে দাঁড়িয়ে আছে – চিরচেনা এমন দৃশ্য খুব দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়। স্কুল চলাকালীন উপজেলা চত্ত্বরের নির্জনে বসে মোবাইলফোনে নীল ছবি দেখা আর পাশের রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাওয়া মেয়েদের জ্বালাতন করা কিশোর ও যুবকদের তাড়িয়ে ধরে ধরে অভিভাবকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। এ অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেলে পাঠানোর ঘটনা খুব দ্রুত শহরময় ছড়িয়ে যায়।
এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অহরহ তিনি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
আলমডাঙ্গায় যোগদানের পূর্বে তিনি কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলায় নির্বাহি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় ৩ বছরের মধ্যে তিনি পর পর ২ বছর জেলার সেরা ইউএনও হবার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ওই উপজেলার দায়িত্ব পালনের ৩ বছরে তিনি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অর্থদন্ড প্রদান করে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা আদায় করে সরকারী কোষাগার সমৃদ্ধ করেছেন বলে জানা যায়।
শুধু বখাটে আর ইভটিজারই না, তিনি আলমডাঙ্গার মাদকব্যবসায়িদের নিকটও রীতিমত আতঙ্কের নামে পরিণত হয়েছিলেন।