জনতা ব্যাংক হাসাদাহ শাখার ঝাড়ুদারের পেটে ব্যাংকের ২০ লক্ষাধিক টাকা!

জীবননগর ব্যুরো: ব্যাংকের ক্যাজুয়াল পিয়ন কাম-ঝাড়ুদার হয়েও ওমিদুল ইসলাম পিয়ন কিংবা ঝাড়দারের কোনো কাজ-কামই করতেন না। অফিসারের মতো তিনি ব্যাংকের ভেতরে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসতেন। ঝাড়ুদার হয়েও লেজারে টাকা পোস্টিং, এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার, ঋণের প্রোফরমা তৈরি, বিদ্যুত বিল ও ডিপিএসের টাকা গ্রহণসহ নানা কাজ করতেন তিনি। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও অফিসার থেকে শুরু করে গ্রাহকদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিলো অকল্পনীয়। সেই ঝাড়–দার ওমিদুলের পেটে গেছে ব্যাংকের ২০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সুযোগ নিয়ে সে ব্যাংকের সকল কর্মকর্তার সহযোগিতায় ১২ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল অংকের এ টাকা একই ব্যাংকের অপর ৩ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে ওই টাকা চেক দিয়ে তুলে সে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ। এছাড়াও বহু গ্রাহকের টাকা ব্যাংকে জমা না করে ওই টাকা সে আত্মসাৎ করেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত আলোচিত ঝাড়–দার ওমিদুল বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার জনতা ব্যাংকের হাসাদাহ শাখায়।
গ্রাহকদের অভিযোগ, হাসাদাহ গুচ্ছপাড়ার হানেফ আলীর ছেলে জনতা ব্যাংক হাসাদাহ শাখার ঝাড়–দার ওমিদুল ইসলাম ব্যাংকের গ্রাহক রেহেনা পারভীনের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার, জবেদা খাতুনের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লাখ, চিত্তরঞ্জন অধিকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে ৮০ হাজার, কাজল হালদারের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার, কামরুল ইসলামের অ্যাকাউন্ট থেকে ৩২ হাজার, আমিনুল ইসলামের অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ হাজার, আসাদুল ইসলামের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার, জসিম উদ্দিন আহম্মেদের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ হাজার, কামাল উদ্দিন ও শেফালী খাতুনের অ্যাকাউন্ট থেকে ৫২ হাজার ৫৯৯, তুহিন শিকদারের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ১০ হাজার, হাবিবুর রহমানের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ও মিজানুর রহমানের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিভন্ন সময়ে একই ব্যাংকের অপর তিন গ্রাহক মসিউর রহমান, আলি কদর ও তার ছেলে লিটন আহম্মেদের জীবননগর খাদ্য ভান্ডারের অ্যাকউন্টে ট্রান্সফার করে। পরবর্তীতে তাদেরকে সুবিধা দিয়ে ওমিদুল তাদের নিকট থেকে চেকের পাতা নিয়ে ওই ১২ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও সে ব্যাংক শাখার বিদ্যুত ও টেলিফোন বিলের ৪৬ হাজার ৯৩৫, বিদ্যুত বিলের নগদ ৫০ হাজার ও সরকারি ভ্যাটের ৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকাসহ মোট ২০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে। যা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও সে বহু গ্রাহকের নগদ টাকা, বিদ্যুত বিলের টাকা, ডিপিএস’র টাকা ও টেলিফোন বিলের টাকা রসিদে ব্যাংকের সিল মেরে পকেটস্থ করেছে। যার হিসেব ব্যাংকে নেই বলে জানা গেছে। ঝাড়–দার ওমিদুলের এ দুর্নীতিতে ব্যাংকের তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইস্্রাফিল হোসেন, ২য় কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুছ, অফিসার টেলর মো. সাইদুর রহমান, অফিসার টেলর নিখিল কুমার ও অফিসার টেলর শেখ রিফফাত নওরিন সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঝাড়–দার ওমিদুলের এ দুর্নীতি প্রকাশ হওয়ার পর সে ব্যাংক ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ব্যবস্থাপক মো. ই¯্রাফিল হোসেনকে দর্শনা শাখায় ও নিখিল কুমারকে চুয়াডাঙ্গা শাখায় বদলি করা হয়েছে। অন্যরা ওই শাখাতেই বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। ব্যাংকের বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক এসএম সুলতানুল ইসলাম জানান, তিনি চলতি মাসে প্রথম সপ্তাহে বদলি হয়ে এসে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে বসে ঝাড়–দার ওমিদুলের নিকট থেকে অধিকাংশ টাকা উদ্ধার করে তা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের হিসেবে জমা করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ টাকা আদায় করা হয়েছে। বাকি টাকা আগামী সপ্তার মধ্যে আদায় হবে বলে তিনি জানান। তবে ব্যাংকের সিল মেরে গ্রাহকদের নিকট থেকে সে যে টাকা আত্মসাৎ করেছে তার কোনো দায়িত্ব ব্যাংক নেবে না বলে জানান তিনি। ব্যবস্থাপক সুলতানুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ঝাড়–দার ওমিদুল চেক কিংবা দরখাস্ত ছাড়া কেবলমাত্র ট্রান্সফার ভাউচারের মাধ্যমে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য ৩টি অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে। পরে সে ওই ৩ গ্রাহকের নিকট থেকে চেকের পাতা নিয়ে এ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। নিয়ম অনুযায়ী চেক কিংবা দরখাস্তের বলে ভাউচার দিয়ে টাকা ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তৎকালীন ব্যবস্থাপক একজন তরুণ অফিসার ছিলেন। তার সরলতার সুযোগ নিয়ে এবং চোখ ফাঁকি দিয়ে ওমিদুল এ কাজ করেছে বলে তিনি তার মতামত প্রকাশ করেন।

Leave a comment