জীবননগর দোয়ারপাড়ায় বাড়ি নিয়ে দু পক্ষের রশি টানাটানি খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রুহুল

জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলা শহরের দোয়ারপাড়ায় খাস জমিতে অবস্থিত বাড়ি নিয়ে রশি টানাটানি করছেন দু পক্ষ। নুরজাহান বেগমের কাছ থেকে ভূমিহীন রিকশাচালক রুহুল আমিন এ বাড়ি কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করলেও পরবর্তীতে নুরজাহান প্রতারণা পূর্বক এ জমি হোটেল শ্রমিক আজিবার রহমানের নিকট বিক্রি করেন। আজিবার বাড়ির দখল পেতে পৌরসভায় মামলা করেন। পৌর কর্তৃপক্ষ বাড়ি জবর দখলের অভিযোগ এনে রুহুল আমিনকে তার ঘর থেকে নামিয়ে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ঘরের ভেতর শিশু সন্তানের বইসহ আটকা পড়েছে কাঁথা-কাপড় ও খাদ্যদ্রব্য। এ অবস্থায় ঘরের পাশে খোলা আকাশের নিচে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রিকশাচালক রুহুল। রুহুল আমিনের অভিযোগ বলেন, নুরজাহানের নিকট থেকে প্রথম ক্রয় সূত্রে তিনি এ বাড়ির মালিক। তিনি দু মাস ধরে এ বাড়িতে বসবাস করছেন। তাকে অন্যায়ভাবে ঘর থেকে নামিয়ে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি অবিচারের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলে অবিলম্বে তার ঘরের দরজার তালা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
দোয়ারপাড়ার হোসেন আলীর ছেলে রিকশাচালক রুহুল আমিন আরও জানান, প্রতিবেশী শাহাজান আলীর স্ত্রী নুরজাহানের খাস জমির ওপর ২ কামরা বিশিষ্ট একটি টিন সেডের বাড়ি রয়েছে। গত কয়েক বছর পূর্বে তিনি পুরাতন লক্ষ্মীপুরে বাড়ি নির্মাণ করে চলে যান। বাড়িটি দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। আমি একজন ভূমিহীন। বাড়ি-ঘর না থাকায় বসবাসের জন্য নুরজাহানের নিকট থেকে বাড়িটি চেয়ে নিই। বসবাস শুরু করি। একপর্যায়ে নেমে যায়। সম্প্রতি নুরজাহান বাড়িটি বিক্রি করে দিতে চাইলে আমি কিনতে আগ্রহী হয়। ৯০ হাজার টাকায় বাড়িটি খরিদ করি। খাস জমির ওপর বাড়ি হওয়াতে গ্রামের ৬ জন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে গত ৪ আগস্ট শাদা কাগজে বিক্রি নামা সম্পাদন করা হয়। এ দিন নুরজাহান আমার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে আমাকে ঘরে তুলে দিয়ে বাড়ির দখল দিয়ে যান। আমি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস শুরু করি। এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর আমার প্রতিবেশী বাকের আলী শেখের ছেলে হোটেল শ্রমিক আজিবার নুরজাহানের নিকট থেকে এ বাড়ি কিনেছেন দাবি করে আমাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। পৌরসভায় মামলা করেন। গত বৃহস্পতিবার ছিলো পৌরসভায় শুনানীর দিন। সোমবার উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে আবার শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু এ দিন বিকেলে কাউন্সিলর আবুল কাশেম ও আফতাব উদ্দিন পৌরসভার কর্মচারী ও পুলিশ নিয়ে হঠাত আমার বাড়িতে হাজির হন। মামলা চলাকালীন সময়ে আইন অমান্য করে জোরপূর্বক বাড়ি দখল করেছি এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে স্ত্রী ও দু সন্তানসহ আমাকে ঘরে থেকে নামিয়ে দিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। ঘরের মধ্যে আমার দু ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাব্বির ও ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র শিহাবের বই-খাতা, কাঁথা-কাপড় ও খাদ্যদ্রব্য আটকে পড়ে। অনুরোধ করি রান্না করার খাবারগুলো বের করে দিতে। কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি। এ অবস্থায় আমি ৩ শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ওপর অবিচার করা হচ্ছে। অবিলম্বে ঘরের তালা খুলে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
এদিকে আজিবারের দাবি, নুরজাহানের নিকট থেকে তিনি ঘরটি ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় কিনেছেন। বাড়ি কেনার স্ট্যাম্প আছে। আমার এখন বাড়ির দখল প্রয়োজন। ঘরের বিক্রেতা নুরজানান অবশ্য এখন রুহুল আমিনের নিকট এ বাড়ি পূর্বে বিক্রি করে দেয়ার ঘটনা অস্বীকার করছেন। তিনি বলছেন আজিবারের নিকট তিনি এ বাড়ি বিক্রি করেছেন, রুহুলের নিকট নয়।
সংশ্লিষ্ট পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোয়েব আহমেদ অঞ্জন জানান, বাড়িটি প্রকৃতপক্ষে রুহুল আমিনই কিনেছেন। পরবর্তীতে নুরজাহান প্রতারণা পূর্বক আজিবারের কাছে বাড়িটি বিক্রি করেছেন বলে আমি শুনেছি। প্রথম ক্রয় ও দখলসূত্রে এ ঘরের মালিক রুহুলেরই হওয়ার কথা। এছাড়াও পৌরসভার লোকজন সেখানে গেলেও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়া সত্বেও বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি।