চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত পরিস্থিতির ক্রমাবনতি : গ্রাহক সাধারণের দীর্ঘশ্বাস

হাজরাহাটি ফিডারে সারাদিন বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকার পর রাতেও লোডশেডিংয়ে ক্ষোভ পৌঁছায় অসহনীয় মাত্রায়

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতির নূন্যতম উন্নতি হয়নি, বরং দিন দিন অবনতিই হচ্ছে। গ্রাহক সাধারণ ক্ষোভে ফুঁসলেও প্রতিকার পাচ্ছে না। ছাড়ছে দীর্ঘশ্বাস। গতকালও চুয়াডাঙ্গার প্রায় প্রতিটি ফিডারেই দফায় দফায় বিদ্যুতের লোডশেডিং দিতে হয়েছে। হাজরাহাটি ফিডারে তো প্রায় সারাদিনই বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়নি। মেরামতের কারণেই নাকি ওই ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ সকাল ৯টা ৪২ থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত বিদ্যুত সবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। মেহেরপুর ওজোপাডিকোর গ্রাহক ছাড়া পল্লি বিদ্যুত গ্রাহকদেরকেও অসহনীয় লোডশেডিং সহ্য করতে হয়েছে।
ওজোপাডিকোর চুয়াডাঙ্গা বিতরণ কেন্দ্রের আওতাভুক্ত ফিডারগুলোর মধ্যে হাজরাহাটি ফিডারে প্রায় সারাদিন বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রাখলেও মেরামতের খবর পেয়ে গ্রাহকদের মধ্যে তেমন উত্তেজনা ছিলো না বললেই চলে। তবে এ ফিডারে রাতে কয়েক দফা লোডশেডিং দিলে ক্ষোভের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়। তাদের অনেকেই রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিয়ে পত্রিকা অফিসে খবর দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত রাজপথ কাপেনি। এ ক্ষোভের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গার অন্যান্য ফিডারে বিদ্যুত পরিস্থিতির তথ্য নিতে গেলে যে চিত্র পাওয়া গেছে তাও ভয়ানক। শুধু হাসপাতাল ফিডারের পরিস্থিতি সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয় বলে জানিয়েছে ওজোপাডিকোসূত্র। বড়বাজার ফিডারে সকার ১০টা ৫৫ মিনিটে বিদ্যুত যায়, আসে ১১টা ৮ মিনিটে, ২টা ২৮ মিনিটে গিয়ে আসে ৩৮ মিনিটে। ২টা ৪৪ মিনিটে যাওয়ার পর আসে ৪ মিনিট পরে। এসব ছিলো মেরামতজনিত আসা যাওয়া। লোডশেডিং ছিলো ৩টা ২৫ থেকে ৪টা ২৩ ও রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। বিজিবি ফিডারের দশা ছিলো অন্যগুলোর চেয়ে তুলনামূলক বেশি খারাপ। বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে যাওয়ার পর আসে ১৫ মিনিটের মাথায়, ১টা ১০ মিনিটে গিয়ে ফেরে তিন মিনিটের বিরতি নিয়ে। ২টা ৩৮ থেকে ৩টা ২৫ পর্যন্ত ছিলো লোডশেডিং। ৬টা ২৪ মিনিটে যাওয়ার পর ফেরে ৩৪ মিনিটে। ৬টা ৪০ থেকে ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ছিলো লোডশেডিং। ১০টা ৩৫ মিনিটে যাওয়ার পর ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত একই কারণে এ ফিডারে বিদ্যুত দিতে পারেনি ওজোপাডিকো।
এদিকে কলেজ ফিডারের হালও অন্যগুলোর তুলনায় মোটেই ভালো নয়। ১টা ৩৫ মিনিটে যাওয়ার পার ফেরে ২টা ২৮ মিনিটে। ৬টা ১ মিনিটে যাওয়ার পর ফিরতে সময় লাগে ৩১ মিনিট। ৯টা ৩৫ মিনিটে যাওয়ার পর আসে ১০টা ৩৫ মিনিটে। ১১টা ৩৯ মিনিটে যাওয়ার পর ১১টা ৪৯ মিনিটে ফেরে। এই ১০ মিনিট মেরামতের জন্য হলেও বাকিগুলো ছিলো লোডশেডিং।
এত লোডশেডিং কেন? চাহিদা মতো বিদ্যুত না পাওয়ার কারণেই ফিডারগুলোতে পালাক্রমে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ করতে হচ্ছে।
জাফরপুর গ্রিড সাব স্টেশনসূত্র বলেছে, গতকাল চুয়াডাঙ্গা ওজোপাডিকোর বিতরণ কেন্দ্রে সকাল ১১টায় ১৭ মেগাওয়াট, দুপুর ১২টায় ১৬ দশমিক ৮ মেগাওয়াট, ১টায় ১৫ দশমিক ৫ মেগাওয়াট, ২টায় ১৪ ও ৩টায় ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়েছে। পল্লি বিদ্যুতে দেয়া হয়েছে সকাল ১০টায় ৩২, ১১টায় ২৯ দশমিক ৩, ১২টায় ২৩, ১টায় ২৫, ২টায় ২৫ দশমিক ২ ও ৩টায় ২৫ দশমিক ১ মেগাওয়াট বিদ্যুত। ওজোপাডিকোর চুয়াডাঙ্গা বিতরণ কেন্দ্রের চাহিদা ২১ থেকে ২২ মেগাওয়াট, পল্লি বিদুতে চাহিদা প্রায় ৬০ মেগাওয়াট। একেতো চাহিদা মতো বিদ্যুত মিলছে না, তার ওপর রয়েছে মেহেরপুরের বিশেষ বরাদ্দ। এছাড়াও বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থাও নড়বড়ে হয়ে পড়ায় মাঝে মাঝে মেরামতের কারণে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ করতে হয়। সব মিলিয়ে গ্রাহক সাধারণ বিদ্যুত না পেয়ে ফুঁসছে। আসন্ন বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরেদর লেখাপড়া বিঘিœত হওয়ায় অভিভাকমহলও ক্ষুব্ধ। বিদ্যুত নির্ভর কলকারখানাগুলোর মালিকদের দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। প্রতিকার চেয়ে পদস্থ কর্তার আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন সকলে।