বাংলাদেশ ও স্পেনে ১২ জন আটক : সংবাদ সম্মেলনে র্যাব
স্টাফ রিপোর্টার: পারস্পারিক গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ ও স্পেন। বাংলাদেশের র্যাব ১১ জনকে ও স্পেনে ১ জনকে গ্রেফতার করেছে সেদেশের পুলিশ। স্পেনে গ্রেফতার হওয়া আতাউল হক সবুজ তার বড় ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান রাজধানীর কাওরানবাজারে আইব্যাকস টেকনোলজিস নামের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিরিয়ায় ৩৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা জঙ্গি অর্থায়নের চেষ্টা করেছিলেন। সবুজ স্পেনের ‘আইসিংকটেল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। তার বড় ভাই সাইফুল হক সুজন ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর সিরিয়ার রাকায় ড্রোন হামলায় নিহত হন। আইএসের পক্ষে তিনি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
র্যাব শুক্রবার বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হেলাল উদ্দিন (২৯), আলআমিন (২৩), ফয়সাল ওরফে তুহিন (৩৭), আল মামুন (২০), আমজাদ হোসেন (৩৪), মঈন খান (৩৩), তাজুল ইসলাম ওরফে শাকিল (২৭), মো. নাহিদ (৩০), টলি নাথ (৪০) ও জাহেদুল্লাহকে (২৯) আটক করেছে। এর মধ্যে তাজুল ও টলি নাথকে খুলনা ও নাহিদকে রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের গ্রেফতার করা হয়েছে রাজধানীর পল্লবী থেকে। তাদের কাছ থেকে ১১টি ল্যাপটপ, ১২টি মোবাইল ফোন, ৭টি কার্ড পাঞ্চিং মেশিন, পাসপোর্ট ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে স্পেনের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট যোগাযোগ করে। দ্বিপাক্ষিক গোয়েন্দা তথ্যর কারণে এই সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে যা গোয়েন্দা সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনার যোগ্য। তিনি বলেন, সবুজ স্পেনে আইসিংকটেল থেকে বাংলাদেশে ওয়ামি নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পনির মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়ন করতেন। তার স্ত্রীও স্পেনে বসবাস করেন। তার বিরুদ্ধেও সেই দেশের আইন-শৃংখলা বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। যুক্তরাজ্যের একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর কারওরান বাজারে টিকে ভবনে সুজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আইব্যাকস টেকনোলজিস লিমিটেডের কার্যালয়ে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই সময় হাতেনাতে ৩৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকাসহ সুজনের বাবা আবুল হাসনাত, তার ভাই হাসানুল হক গালিব, সুজনের শ্যালক তাজুল ইসলাম শাকিল, কর্মচারী নাহিদউদ্দোজা মিয়া ও নাহিদুল ইসলাম নাহিদকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় পরিদর্শক কবীর হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে দুইটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে সবুজ ও সুজনের বাবা হাসনাত কারাগারে মারা যান। অন্যরা জামিনে আছেন। সেই মামলার আসামি নাহিদ ও তাজুল এই অভিযানেও গ্রেফতার হয়েছেন। মামলা দুটি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্ত করে নিশ্চিত হয় যে ইউরোপ থেকে সুজন তার প্রতিষ্ঠান আইব্যাকসে হন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান জঙ্গিবাদে ব্যবহারের জন্য। ওই টাকা সদরঘাট-২৫৬ নামে কোড ব্যবহার করে হন্ডির মাধ্যমে আইব্যাকস প্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো হয়েছিলো। তদন্তে কর্মকর্তারা আরো জানতে পারেন জঙ্গি বাশারুজ্জামানের হাত হয়ে কানাডা প্রবাসী তামিম আহমেদ চৌধুরীর কাছেও সুজন জঙ্গি অর্থায়ন করেছে। এই তামিম আহমেদ চৌধুরী ছিলেন গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার প্রধান সমন্বয়কারী। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তামিম।