গরুচুরি করে পালানোর সময় পাকড়াও : গণপিটুনিতে কোমরপুরের শফিকুল নিহত

দামুড়হুদার রামনগরের গোয়াল থেকে গরু নিয়ে লাটাহাম্বারে তোলার আগেই প্রতিরোধ : পালিয়েছে বিষ্ণুপুরের তরুসহ ৩ জন

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে স্টাফ রিপোর্টার: গরু চুরি করে পালানোর সময় ধরাপড়ে পিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গা কোমরপুরের শফিকুল ইসলাম শফি (৪৫)। গতপরশু রাতে দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের রামনগর ক্লাবপাড়ার স্বপনের বাড়ির গোয়াল থেকে দুটি এঁড়ে গরু চুরি করে পালানোর পথে রামনগর-গোকুলখালী ওলিকাটা ব্রিজ নামক স্থান থেকে তাকে ধরে পিটুনি দেয় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।
দেড় দু সপ্তাহের ব্যবধানে রামনগর ও কলাবাড়িসহ পার্শ্ববর্তী ৫ গ্রাম থেকে ১৩টি মূল্যবান গরু চুরির খবরে ক্ষোভে ফুঁসছিলো গ্রামাবাসী। এর মাঝে গত পরশু গরু চুরি করে সটকানোর আগেই প্রতিরোধের মুখে একজন ধরা পড়লেও পালিয়েছে তার সাথে থাকা আরও তিনজন। ভালাইপুর মোড়ের অদূরবর্তী মুরগি খামারের নিকট থেকে গরু দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। দুটি গরুর মধ্যে একটি বাঁধা ছিলো, অপরটি ছিলো ছাড়া। লাটাহাম্বার সেখানে ভেড়ালেও তাতে তুলতে না পেরে সটকে রক্ষা পেয়েছে তিনজন। নিহত শফির মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকালই রাতে নিজ গ্রাম কোমরপুর কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
পিটুনিতে নিহত শফিকুল ইসলাম শফি কোমরপুর ব্রিজমোড়পাড়ার মৃত চৌকিদার সদর মল্লিকের ছেলে। তার প্রথম স্ত্রী এক কন্যা নিয়ে কোমরপুরে থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে শফি দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হাসপাতালপাড়ার মাদার বক্সর বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে আসছিলো। দ্বিতীয় স্ত্রীর রয়েছে এক ছেলে। গতপরশু বাড়ি থেকে বের হয়ে সে তার সাঙ্গপাঙ্গের সাথে গিয়ে মধ্যরাতে ধরা পড়ে নিহত হয়। মারা যাওয়ার আগে শফিকুল তার সহযোগীদের মধ্যে বিষ্ণুপুরের তরুনের নাম বলে গেছেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের রামনগর ক্লাবপাড়ার গোলাম কিবরিয়ার ছেলে স্বপন আলী নিজের বাড়িতে দুটি এঁড়ে গরু পালন করছেন। তিনি বলেছেন, রাত আনুমানিক ১টার দিকে গোয়ালে গরুর খাবার দিতে গিয়ে দেখি গরু নেই। সাথে সাথে চিৎকার করে পাড়া প্রতিবেশীসহ নিকটজনদের ডেকে তুলি। কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে খোঁজাখুজি শুরু করি। ওলিকাটা পুলের নিকট ধরাপড়ে একজন। তাকে ক্লাবমোড়ে নিয়ে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। গ্রামের ক্ষুব্ধমানুষ মারধরও করে। খবর দেয়া হয় পুলিশে। স্থানীয়রা বলেছে, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে পার্শ্ববর্তী দলিয়ারপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ সাদি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপস্থিত হন। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তখন চোরকে পুলিশের হাতে না দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি মারা যান। শফিকুলের মৃতদেহ মোড়েই পড়ে ছিলো। সকাল ৯টার দিকে দামুড়হুদা থানা পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয় পুলিশ। দুপুরের পর ময়নাদতন্ত সম্পন্ন হয়। বিকেলে মৃতদেহ নেয়া হয় তার পৈত্রিকবাড়ি কোমারপুরে।
রামনগর-কলাবাড়ির কৃষক সাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, কয়েকদিনের ব্যবধানে গোপিনাথপুর থেকে ২, রামনগর থেকে ৩, কলাবাড়ি থেকে ৩, লক্ষ্মীপুর থেকে ৩ ও কুলপালা থেকে দুটি গরু চুরি হয়। একের পর এক গরু চুরি হলেও পুলিশের তরফে তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এ কারণেই ক্ষোভে ফুঁসছিলো এলাকার সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে যখন হাতেনাতে ধরা পড়েছে চোর তখন কী আর তাকে সহজে পুলিশের হাতে তুলে দেয় কেউ। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ওই শফিকুলের নিকট থেকে এলাকার চোরচক্রের সকল সদস্যেরই নামধাম প্রকাশের চেষ্টা করেছে। যদিও কেউ কেউ স্বীকার করেছেন, পিটুনিটা শেষ পর্যন্ত ছিলো অমানবিক। পুলিশের ওপর আস্থাহীনতাই পিটুনির মাত্রা বেড়েছে বলে অনেকের অভিমত। পুলিশ অবশ্য বলেছে, সার্বিক দিকই বিবেচনা করে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ বাদী হয়ে গতরাতেই দামুড়হুদা থানায় একটি মামলা রুজু করেছে।

Leave a comment