কোটচাঁদপুরের হাসপাতাল ওপরে ফিটফাট ভেতরে সদর ঘাট ॥ পদ ২৬ কর্মরত ৫ জন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ওপরে ফিটফাট, ভেতরে সদর ঘাট। কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির দশা এখন বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ বাক্যের মতোই। উপজেলা পর্যায়ের এই হাসপাতালটিকে পরিচ্ছন্ন, আধুনিক ও আকর্ষনীয় করে তোলা হলেও ডাক্তারের অভাবে রোগীরা সেবা পাচ্ছে না। বর্তমানে ২৬ জন চিকিৎকরে পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। যার মধ্যে একজন প্যাথলজিস্ট ও একজন এনেসথেশিয়া রয়েছে।
জান গেছে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি। উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন আর একটি পৌরসভার দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি। ৩১ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যা করা হয়েছে। শুরু থেকেই কমপ্লেক্সটি চলছিলো জোড়াতালি দিয়ে। প্রয়োজনের তুলনায় জনবল না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব ছিলো না। কমপ্লেক্সেটি ছিলো অপরিষ্কার, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। যা এক বছরের ব্যবধানে কমপ্লেক্সটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, দালালমুক্ত পরিণত হয়েছে। এখন নিয়মিত অস্ত্রোপচার হচ্ছে। রোগীরা ভালো পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ আর আন্তঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু ডাক্তারের অভাবে রোগীদের যে দুর্দশা সেটা রয়েই গেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডাক্তার শাহাব উদ্দিন। তিনি যোগদান করেই বদলে দেন কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালটি। কমপ্লেক্সের কর্মী বাবলুর রহমান জানান, ডা. মো. শাহাব উদ্দিন স্যার যোগদানের পরই কমপ্লেক্সের বাইরে সাইকেল রাখার জায়গা তৈরি করেছেন। এরপর কমপ্লেক্সের সামনে ফুলের বাগান তৈরি করেন। কমপ্লেক্স এলাকার ভুতুড়ে পরিবেশ দূর করতে চারিদিকে সার্চলাইট স্থাপন করেন। গোটা কমপ্লেক্স সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসেন। কমপ্লেক্ষের ওয়ার্ডগুলোতে সাউন্ডবক্স স্থাপন করেন। সেবিকাদের কক্ষে বসে মাইক্রোফোনরে সাহায্যে রোগিদের নানা তথ্য দেয়া হচ্ছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বসার জন্য ২০ সেট অত্যাধুনিক এসএস চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে ৪৬ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন স্থাপন করা হয়েছে। অনেক পরিবর্তনের পরও ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালের রোগীরা অনত্র চলে যাচ্ছে। চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে পারছেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. শাহাব উদ্দিন জানান, এসকল কাজে কমপ্লেক্সে কর্মকর্তারা ও স্থানীয়রা তাকে সহযোগিতা করেছেন। এখনও ১৩ জন কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছেন যাদের বেতন স্থানীয়ভাবে হয়ে থাকে। বিভিন্ন মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় তারা সবকিছু করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখলেও ডাক্তার সল্পতার কারণে রোগীদের চাহিদামতো সেবা দিতে পারছেন না। মাত্র ৩ জন মেডিকেল অফিসার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ইকড়া গ্রামের অমিউদ্দীন জানান, এখানকার উন্নত পরিবেশে তারা খুশি। তবে ডাক্তার না থাকায় মাঝে মধ্যে সমস্যা হচ্ছে। বলুহর গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, আগে তারা বেসরকারি ক্লিনিকে ছুটতেন। এখন আর তাদের সেখানে যেতে হয় না। তবে ডাক্তার নেই বলে তাদের উন্নত চিতিৎসা নিতে চলে যেতে হয়।