রোহিঙ্গা ঠেকাতে মরিচ গুঁড়া ও স্টান গ্রেনেড ছুড়ছে ভারত

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে তাদের ওপর ‘মরিচগুঁড়া ও স্টান গ্রেনেড’ ছুড়ছে ভারত। কর্মকর্তারা শুক্রবার একথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সংলগ্ন পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে রোহিঙ্গা ঠেকাতে ভারত এমন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইতোমধ্যেই দেশটিতে বাস করে আসা প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে বের করে দিতে চায়। নিরাপত্তায় ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে এ বাহিনীর হাতে যে কোনও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নির্মমভাবে ঠেকানোরও ক্ষমতা দেয়া আছে।

নয়া দিল্লিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ- এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা তাদেরকে গেফতার কিংবা গুরুতর জখম করতে চাই না। তবে ভারতের মাটিতে রোহিঙ্গাদের সহ্য করা হবে না। তিনি আরও বলেন, ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করা কয়েকশ রোহিঙ্গাকে তাড়িয়ে দিতে আমরা মরিচের গুঁড়াযুক্ত গ্রেনেড ব্যবহার করছি… পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। রোহিঙ্গদের ঠেকাতে নিরাপত্তারক্ষীদেরকে মরিচের গুঁড়াযুক্ত গ্রেনেড এবং স্টান গ্রেনেড দুই-ই ব্যবহার করতে বলা আছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফ এর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পিআরএস জসওয়াল। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের একটি বিশাল অংশের পাহারায় নিয়োজিত রয়েছেন তিনি।

মরিচের গুঁড়ার গ্রেনেড ব্যবহারে শরীরে জ্বালাপোড়া হয়। আর স্টান গ্রেনেড ছুড়লে প্রচণ্ড শব্দ ও আলোর ঝলকানি সৃষ্টি হয়। এতে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয় এবং অনেক সময় সাময়িকভাবে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার দিন দিনই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়ে উঠছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বৃহস্পতিবার অবৈধ অভিবাসী হিসাবে রোহিঙ্গাদেরকে ভারত থেকে বিতাড়িত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দুই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি শুক্রবার ভারতের শীর্ষ আদালতে বলেছেন, শান্তিপ্রিয় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বেশিরভাগই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৪ অগাস্ট রাতে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে বিদ্রোহীদের হামলার ঘটনার পর শুরু হওয়া সেনা অভিযানের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের হিসেবে, গত চার সপ্তাহে ৪ লাখ ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতেও মরিয়া হয়ে আছে কয়েকশ’ রোহিঙ্গা।

অনুপ্রবেশ আটকাতে সীমান্তে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে ভারত। দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা রোহিঙ্গাদের ওপর জোর নজরদারির জন্য মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা চাইছেন।

ওদিকে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে লড়াইয়ের জন্য রোহিঙ্গদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টার সন্দেহে জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় পুলিশ। ২০১৪ সাল থেকে ভারতের কারগারগুলোতে রয়েছে ২৭০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা। নয়া দিল্লির পুলিশ কর্মকর্তা প্রমোদ সিং খুশওয়াহ বলেছেন, তদন্ত চালিয়ে দেখা গেছে আল কায়দা মিয়ানমারে লড়াই শুরু করার জন্য ভারত এবং বাংলাদেশকে তাদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে। আর তাই তারা স্পষ্টতই ভারতের জন্য হুমকি।

Leave a comment