মুন্সিগঞ্জে কারখানায় আগুনে হতাহতের ঘটনায় মামলা

চুয়াডাঙ্গার চাঁদপুরের ইস্রাফিলের দাফন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: মুন্সিগঞ্জে আইডিয়াল টেক্সটাইল মিলসে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিকসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করে। আসামিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপকসহ ৫ জন এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। গত বুধবার পঞ্চসার ইউনিয়নের চরমুক্তারপুরে আইডিয়াল টেক্সটাইল মিলে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ পোশাককর্মী ও একজন রান্নার লোক নিহত হন। এদিকে চুয়াডাঙ্গার চাঁনপুর গ্রামের ইস্রাফিল হোসেনের লাশ দুপুর ১২টার দিকে দাফন করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনার দিন যে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছিলো- তাদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে বলেও তিনি জানান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাতীয় শ্রমিকলীগ মুন্সিগঞ্জ শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি মো. ফিরোজ আহম্মেদের সভাপতিত্বে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক শোক ও প্রতিবাদসভার আয়োজন করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মৃত রহিম বক্স মণ্ডলের ছেলে ইস্রাফিল বছর দুয়েক আগে ডিজাইনের কাজ নিয়ে ঢাকার মুন্সিগঞ্জে যায়। সেখানেই সে এ কাজ করে আসছিলো। বিয়ে করেনি। গত কোরবানির ঈদেও সে বাড়িতে এসেছিলো। ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পর কর্মস্থলে মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হলো তাকে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তার লাশ বাড়িতে নেয়া হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। চুয়াডাঙ্গার ইস্রাফিল ছাড়াও এ ঘটনায় নিহত হন সিরাজগঞ্জ জেলার সাহাদাতগঞ্জের আমির হামজার ছেলে নাজমুল, সিরাজগঞ্জ জেলা বড়মাথা থানার হানিফ বেপারীর ছেলে বাবু মিয়া, ঝিনাইদাহের কালীগঞ্জ থানার মৃত সাহেদ আলীর ছেলে সজিব, মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার কলিমউদ্দিনের ছেলে রতন মিয়া (২২) এবং বরগুনার জেলার বাবনা থানা চারাখালী গ্রামের রশিদের স্ত্রী করখানার বাবুর্চি হাসিনা (৫০)।

এ সময় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, বৃহস্পতিবার লাশ বুঝিয়ে দেয়ার সময় তাদের সামান্য কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। একজন প্রশ্ন রাখেন, একটি জীবনের দাম কি এই কয়টা টাকা? যদি টাকা দিয়ে জীবন কেনা যায়, তাহলে তারা যা দিয়েছেন, আমরা তার চেয়ে বেশি দেবো। আমাদের স্বজনদের ফিরিয়ে দেয়া হোক। এ সময় অন্য কয়েকজন স্বজন বলেন, যদি প্রতিষ্ঠানটি সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে তৈরি করা হতো, সঠিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতো, ভবনে ওঠা-নামার জন্য বিকল্প সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকতো, হয়তো আজকে আমাদের আপনজনেরা আমাদের সাথেই থাকতো। কাউকে লাশ হতে হতো না। এ সময় বক্তারা ঘটনার সাথে জড়িত সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। একই সাথে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য বীমাসহ প্রভিডেন্ট ফাণ্ড, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, একাধিক সিঁড়ি রাখা ও আগুন লাগলে কী করতে হবে এ ব্যাপারে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন।