ফলন কম হলেও বাজার দরে খুশি চাষিরা খুশি
নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মাঠে আগাম অটোজাতের শিমের আবাদ করেছে চাষিরা। বৈরি আবহাওয়ায় ফলন কম হলেও বাজার দর ভালো থাকায় শিমচাষিরা খুশিই আছে। এরি মধ্যে বেচা বিক্রি করে অনেক চাষি আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছেন। ফলে বদলে দিয়েছে গ্রামীন অর্থনীতির চিত্র। স্বল্প সময়ে টাকার মুখ দেখতে পাওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদী অর্থকারী ফসলের চাষাবাদের চাইতে সবজি আবাদের দিকে ঝুকছে চাষিকুল।
চুয়াডাঙ্গায় মোট জমির পরিমাণ ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৭ হাজার হেক্টর। জেলাতে ভুট্টা আবাদের পর পরই সবজি আবাদ বেশি হয়ে থাকে। আবহাওয়া তুলনামূলক অনুকুল এবং উচু সমতল জমি হওয়ায় জমিগুলো সবজি চাষের উপযোগী। তাই প্রতিবছর কোনো না কোনো প্রকার আগাম সবজির চাষ করে থাকে জেলার কৃষকেরা। অর্থকারী ফসলে ঝুকি থাকায় এ বছর ১২শ হেক্টর জমিতে আগাম অটো জাতের শিম চাষ করেছে চাষিরা। চলতি বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বৈরী আবহাওয়ায়র মধ্যে শিমের আবাদ করেছে চাষিরা। বৈরী আবহাওয়ায় ফলন কম হলেও বাজার দল ভালো থাকায় পুশিয়ে যাচ্ছে শিম চাষিদের। স্বল্প সময়ে সবজি বিক্রি করে টাকার মুখ দেখতে পারায় এ শিমের চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামের মাঠে দিকে তাকালে দেখা যায় আবাদযোগ্য জমিজুড়ে শিম আর শিমের মাচা। মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৪-৫ ফুট উচু বাঁশের মাচা তৈরি করে আবাদ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল অটো জাতের শিম। শিম চাষ এলাকাটিকে সাজিয়েছে সবুজের আবরণে। বিকেল হলেই চাষিরা তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে শিমের পরিচর্যায় ব্যাস্ত থাকেন। কারণ বিকেলের দিকে শিমের পরিচর্জার উপযুক্ত সময়।
কুনিয়াচাঁদপুর গ্রামের শিমচাষি আনোয়ার হোসেন জানান, কয়েক বছর ধরে প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আমি শিম চাষ করে আসছি। প্রথম বছরে চাষটি ঠিকমত বুঝতে না পারায় লাভ ভালো হয়নি। তারপর থেকে চাষ বুঝার পর ভালো লাভবান হই। আমার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরা আগ্রহ হয়ে শিম চাষ চাষ শুরু করেছে। প্রথমে অল্প অল্প জমিতে শিম চাষ করতে করতে চাষিরা এখন ব্যাপক হারে শিম আবাদ করেছে। প্রতিবছর শিম বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করছে চাষিরা। এভাবে ধীরে ধীরে শিম বরবটি, বেগুন, ধনিয়াপাতা, ফুলকপি, আর কাকরোলসহ নানা জাতের শাক সবজির আবাদ এলাকার চাষিরা বেছে নিয়েছে জীনব জীবিকার অবলম্বন হিসেবে। তিনি আরও জানান, গত বছরের ন্যায় এ বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে অটো জাতের শিম চাষ করেছি। আশাকরছি বিঘাপতি একলাখ টাকা করে শিম বিক্রি করতে পারবো। কয়েকদিনের মধ্যেই বিঘা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করে ফেলেছি। আরও ২ লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবো বলে আশা রাখছি। আমার মতো অনেক চাষি শিম চাষ করে ভালো টাকা উর্পাজন করবে শিম বিক্রি করে। মনু মিয়া, এনাফ বিশ্বাস, আবু হানিফ, বোরহান, আমিরুল, মালেক মেম্বার, ফারুক, চান্দু, কাশেম, মালেক বিশ্বাস, মনির হোসেন, নজরুল ইসলাম, শুকুর আলীসহ বেশ কিছু কৃষক শিম চাষ করে বদলে নিয়েছেন নিজেদের ভাগ্য। কৃষকরা জানান, তারা তাদের এ চাষ করতে হাতে কলমে কোনো প্রশিক্ষণ পাননি। নিজ উদ্যোগে দেখা দেখি করে চাষ করছেন। বর্তমানে শিম চাষের নানা উপকরনের দাম বৃদ্দি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যায় কিছুটা বেশি। বীজ লাগানোর পর থেকে এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করতে বীজ, সার, বাঁশ, তার, শ্রমিক, সেচ ধরে খরচ হয় ১৬/১৭ হাজার টাকা। শিমের গাছ মাচায় উঠে গেলে ফুল এবং ফল ধরার সময় পোকা দমন এবং পোচন রোধে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ স্প্রে করতে হয়। ৫০-৫৫ দিনের মধ্যে শিম ধরা শুরু করে। এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত শিম বাজারজাত করতে অন্য কোনো স্থানে যেতে হয়না। রাজধানী শহর ঢাকা থেকে পাইকারী ক্রেতারে এসে তাদের কাছ থেকে শিম কিনে নিয়ে যায়। এছাড়াও কোনো কোনো কৃষক শিম নিজে তুলে পার্শ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করে থাকে। এ বছর শিমের বাজার বেশ ভালো। প্রথম দিকে কেজি প্রতি বাজার দর ১শ থেকে ১১০ টাকা হলেও বর্তমানে শিম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদাম থাকলে শিম চাষিরা বেশ লাভবান হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুর জানান, এলাকার জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপোযোগী। ভুট্টার পরপরই চাষিরা শিমসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে থাকে। সবজি চাষের ব্যাপারে চাষিরা বেশ অভিজ্ঞ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে এলাকার চাষিদের উন্নত কৃষি প্রযুক্তির আওতায় আনতে পারলে শিমসহ সবজি চাষ গ্রমীণ অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতার দার খোলা রয়েছে। আর অটো জাতের শিম এটা মানুষের দেয়া নাম।