কেরোসিন ঢেলে বিজিবি সদস্য পত্নীর গায়ে আগুন : শাশুড়ি গ্রেফতার

আলমডাঙ্গার রোয়াকুলি সাত সকালে নারীকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা চালানোর অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার/মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: কেরোসিনের আগুনে ঝলসে অসনীয় যন্ত্রণায় কাতর আলিফা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। পাঞ্জা লড়ছেন মূলত মৃত্যুর সাথে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিনি তার স্বামীগৃহ আলমডাঙ্গার রোয়াকুলিতে অগ্নিদগ্ধ হন। তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার আভিযোগে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ শাশুড়ি লালীয়া বেগমকে গ্রেফতার করেছে। স্বামী বিজিবি সদস্য খালিদ হাসান সুমন তার অগ্নিদগ্ধ স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঢাকার মেডিকেল কলেজের বার্নইউনিটের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তবে পুলিশ বলেছে, তাকেও গ্রেফতারের জন্য খোঁজা হচ্ছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা রইথনপুরের কিতাব আলীর মেয়ে আলিফার (২২) সাথে আনুমানিক ২ বছর আগে বিয়ে হয় একই উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের রোয়াকুলি গ্রামের আইনাল হকের ছেলে খালিদ হাসান সুমনের সাথে। সুমন বিজিবি সদস্য। নওগায় পোস্টিং। ২ মাসের ছুটিতে। ছুটি শেষের ১৩ দিন আগে গতপরশু স্বামীগৃহে স্বামীর সাথে স্ত্রীর তুমূল ঝগড়া বাধে। পড়শিরা এ তথ্য দিয়ে বলেছে, বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে চিৎকার চেচামেচিতে ছুটে গিলে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে বাড়ির পুত্রবধূ আরিফা। স্বামীসহ স্বামীর লোকজন বলতে থাকে, আলিফা নিজেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়েছে। ১১ মাসের শিশু ছেলে সাইমকে রেখে কি কোনো মা আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়? এ প্রশ্ন তুলতেই স্বামীগৃহের লোকজনের অবয়বে ফুটে উঠে সন্দেহের ছাপ। অগ্নিদগ্ধ আলিফাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। হাপাতালে সাংবাদিকদের সামনে আরিফা নিজেই মুখ খোলেন।
অভিযোগ তুলে বলেন, স্বামী ও শাশুড়ি তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। গতকালই বিকেলে আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে আলিফার শাশুড়ি লালীয়া বেগমকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় নেন। অগ্নিদগ্ধ আলিফার শরীরের ৬০ শতাংশের বেশি পুড়েছে। মুখম-লবাদে বুক থেকে নিচের অংশের প্রায় পুরোটাই ঝলসে গেছে। চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়ার পরামর্শ দেন। গতকালই তাকে নেয়া হয়েছে ঢাকায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১১ মাসের শিশু সাইমকে দাদির কাছে রাখা ছিলো। দাদি গ্রেফতার হওয়ার পর শিশু সাইমকে কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চেত করে জানা যায়নি।
গৃহবধূর স্বাজনরা অভিযোগ করে বলেন, স্বামীর অবর্তমানে বেশ কিছু দিন ধরে যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আলিফা খাতুনকে নির্যাতন করতো। বিষয়টি জানার পর কিছুদিন আগে আলিফা খাতুনের পিতা-মাতা মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে আনেন। কয়েক দিন আগে খালিদ হাসানসহ তার পরিবারের লোকজন চিৎলা গ্রামে আলিফার পিতার বাড়িতে যান। তারা আলিফা খাতুনকে এক পর্যায়ে আবারও বাড়িতে নিয়ে যান।
আলিফার মাসহ তার নিকটজনেরা জামাই খালিদ হাসান সুমনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আরও বলেছেন, বিয়ের সময় নগদ ৩ লাখ টাকা যৌতুক দেয়া হয়। আর আসবাবপত্রে কোনো কমতি রাখা হয়নি। অলিফাকে বিয়ের পর থেকেই ওই শ্বশুরবাড়ি না হয়, বাপের বাড়ি ফেলে রেখেছে। বিয়ের শুরু থেকেই অলিফার ইচ্ছে ছিলো স্বামীর সাথে স্বামীর কর্মস্থলের কোয়াটারে থাকা। এ নিয়েই মূলত ওদের মধ্যে মনমালিন্য দানা বাধে। মাঝে মাঝে ঝগড়াও হতো মূলত এসব নিয়েই। পক্ষান্তরে স্বামী সুমন বলেছেন, ২ মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে বাড়িতেই পড়ে থাকা নিয়ে পরশু রাতে খুনসুটি যে এতোটা ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে টেনে নিয়ে যাবে তা কে জানতো? জানি না নিয়তি এখন আমাদের কোন দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ বলেছে, রোয়াকুলি গ্রামের পুত্রবধূ এক সন্তানের জননী আলিফাকে তার স্বামী ও শাশুড়ি কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। আলিফা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শ্বাশুড়িকে আলমডাঙ্গা থানায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।