গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে চুয়াডাঙ্গার ইস্রাফিলসহ নিহত ৬

মুন্সিগঞ্জে টেক্সটাইল মিলে আগুন
রাসায়নিকের গুদামে ঝালাইয়ের কাজ করায় এ বিপত্তি : মিলের জিএমসহ আটক ৫ : তদন্ত টিম গঠন
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা মুন্সিগঞ্জের আইডিয়াল টেক্সটাইলে অগ্নিকান্ডে সৃষ্ট গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে মারা গেছে ওই মিলের শ্রমিক চুয়াডাঙ্গা চাঁনপুরের ইস্রাফিল ও ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সজিবসহ ৬ জন। গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পুলিশ মিলটির জিএমসহ পাঁচজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালমর্গে রাখা হয়েছে। মিলটির পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন ছিলো না বলে অভিযোগ ওঠেছে। খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ফাঁয়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে ওই মিলের গুদামে রাখা বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পুড়ে গেছে।
নিহত শ্রমিকরা হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মৃত রহিম বক্স ম-লের ছেলে ইস্রাফিল (২৩), সিরাজগঞ্জ জেলার সাহাদাতগঞ্জের আমির হামজার ছেলে নাজমুল, সিরাজগঞ্জ জেলা বড় মাথা থানার হানিফ বেপারীর ছেলে বাবু মিয়া, ঝিনাইদাহের কালিগঞ্জ থানার মৃত সাহেদ আলীর ছেলে সজিব, মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার কলিমউদ্দিনের ছেলে রতন মিয়া (২২) এবং বরগুনার জেলার বাবনা থানা চারাখালি গ্রামের রশিদের স্ত্রী করখানার বাবুর্চি হাসিনা (৫০)। ইস্রাফিলের মৃতদেহ তার নিজ বাড়িতে নেয়ার জন্য নিকটজনেরা মুন্সিগঞ্জে পৌঁচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে আজ বৃহস্পাতিবার সকালে মৃতদেহ নিয়ে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হতে পারবেন তারা।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শওকত আলী মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে মিলটির ছয়তলা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। টেক্সটাইল মিলের ব্যবহৃত রাসায়নিক রাখা হতো নিচতলায়। ওখানেই ঝালাইয়ের কাজ হচ্ছিলো। সেখান থেকে স্ফূলিঙ্গ গিয়ে রাসায়নিকের ওপর পড়তেই আগুন ধরে যায়। পরে পুরো এলাকা অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। যারা মারা গেছেন সকলেই বিষাক্ত গ্যাসে দম বন্ধ হয়ে মারা যান। আগুনে কারখানার রাসায়নিক থেকে সৃষ্ট গ্যাসে এই ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মু. ছিদ্দিকুর রহমান। জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেছেন, অগ্নিকা-ের সঠিক কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সকল নিহতের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এদিকে রাসায়নিকের কটূ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাসায়নিকে আগুন লাগায় যে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে তাতে এখানে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। আশপাশের সাধারণ মানুষের সমস্যাতো হবেই।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আলমগীর হোসাইন বলেন, কারখানার রাসায়নিকের গুদামে ঝালাইয়ের কাজ করার সময় আগুনের এ ঘটনা ঘটে। এটি নিছক দুর্ঘটনা। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারখানার জিএম গিরিশ সরকারসহ ৫ জনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মুন্সীগঞ্জ ফাঁয়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শওকত আলী জোয়ারদার জানান, মিলটির ভেতরের অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। রাসায়নিকের ড্রাম ও কাপড়ে এমন করে ঠাসা ছিলো যে শ্রমিকরা বের হবার সুযোগ পাননি। কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের নিরাপত্তার তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। রাসায়নিকের ড্রাম একটির গা ঘেষে আরেকটা ছিলো। ফলে সহজেই আগুন ছড়িয়ে যায়। এছাড়া পুরো বিল্ডিংয়ে সরু একটা সিঁড়ি। আর কোনো সিড়িও নেই। তিনি আরও বলেন নিচ তলায় যারা কাজ করছিলো এবং যারা শ্রমিক ছিলো তারা বেড়িয়ে যেতে পারলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কর্মরত ৬জন বের হতে পারেনি।
কারখানটির মালিক ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামসুল আলম সবজল বলেন, কিভাবে আগুন লেগেছে তা আমি নিশ্চিত নই। আগুন লাগার পর পরই আমার পাঁচ জন লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে যে যাচ্ছে তাকেই পুলিশ গ্রেফতার করছে। ইতিমধ্যে মিলটির বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়ায় মিলটি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না।

 

 

এদিকে চুয়াডাঙ্গার চাঁনপুর গ্রামসূত্র বলেছে, মৃত রহিম বক্স মন্ডলের ৫ ছেলে এক মেয়ের মধ্যে ইস্রাফিল ছিলো সবার ছোট। সে বছর দুয়েক আগে ডিজাইনের কাজ নিয়ে ঢাকার মুন্সিগঞ্জে যায়। সেখানেই সে এ কাজ করে আসছিলো। বিয়ে করেনি। গত কোরবানির ঈদেও সে বাড়িতে এসেছিলো। ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পর কর্মস্থলে মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হলো তাকে।