দেশের উন্নয়ন চাইলে নৌকায় ভোট দিন

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে সেবা করার সুযোগ দিবেন। তাহলেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। আর যদি দুর্নীতিবাজ আর জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারী বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশ দুর্নীতিবাজদের দখলে চলে যাবে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের দেশ হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান সুগার মিল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে আরো বলেন, ‘আপনার দেখেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকলে কী হয়? সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই, মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। এমনকি জনগণের টাকা, এতিমখানার টাকা, এসব টাকাও তারা চুরি করে খায়, বিদেশে তারা বিত্ত-বৈভব বাড়ায়। এটাই তাদের চরিত্র। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে কোন দরিদ্র থাকবে না ইনশাল্লাহ। আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বসভায় আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলবো— এটাই হচ্ছে আমার প্রতিজ্ঞা। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ।

রাজশাহীবাসীর কাছে খালি হাতে আসেননি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রাজশাহীকে রক্ষার জন্য বাঁধ আমরা নির্মাণ করে দিয়েছি। আরো যেসব অঞ্চল ভাঙনপ্রবণ, সেসব অঞ্চলেও আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বন্যায় যতো রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়েছে ইনশাল্লাহ সব আমরা মেরামত করে দেব। প্রধানমন্ত্রী বৃষ্টি ভেঙ্গে জনগণের আগমনের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। রাজশাহীর মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যা যা করণীয়-আমরা তা করে যাবো।

রাজশাহীতে কৃষি উত্পাদন বহুমুখীকরণে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ব্যাপকভাবে শাক-সবজি-ফলমূল যাতে উত্পাদন হয়, মাছের উত্পাদন বাড়ে-সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইতোমধ্যেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাথে সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষির ওপর যাতে আরো উন্নত গবেষণা হয়, তারজন্য যে সব ফ্যাকাল্টি রয়েছে, সেগুলোও আমরা আরো উন্নত করে দেব। তিনি বলেন, এখন অন্তত এইটুকু দাবি আমরা করতে পারি এই উত্তরবঙ্গে যে মঙ্গা ছিল, সেই মঙ্গা এখন আর নাই। আর কোনদিন মঙ্গা আসবেও না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার বন্যার কারণে কোন কোন জায়গার ফসল নষ্ট হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই খাদ্য কেনা শুরু করেছি। প্রত্যেকটা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করছি। নদী ভাঙনের ফলে যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে, তাদেরকে ঘরবাড়ি আমরা তৈরি করে দেব। ইতোমধ্যে সেই তালিকাও করা শুরু হয়েছে। ঘরের দোরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ সকল পেশাজীবীদের কাছে আমি একটি আবেদন রেখে যাব- এই বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। আপনাদের ছেলে-মেয়েরা বিপথে চলে গেল কিনা অভিভাবক-শিক্ষকদের অবশ্যই তা দেখতে হবে।

সমাবেশে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এক সময় জঙ্গিদের আস্তানা ছিল রাজশাহী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে রাজশাহী এখন উন্নয়ন ও শান্তির শহর। তিনি বলেন, নোবেলজয়ী অং সাং সুচি যেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করছেন, সেখানে শেখ হাসিনা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের মায়ের স্নেহ দিয়ে আশ্রয় দিচ্ছেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় শেখ হাসিনার নোবেল পাওয়া উচিত। পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি প্রমুখ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং মাঠের অভ্যন্তরে একহাঁটু কাদাপানিতে দাঁড়িয়ে লাখো জনতা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনেন।

৬টি প্রকল্প উদ্বোধন: এর আগে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে ৬টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ১৬টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭শ’ কোটি টাকা। বিকেলে হরিয়ান চিনিকল মাঠে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উদ্বোধন করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পবা উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উন্নয়ন, ৬তলা বিশিষ্ট প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র এবং বাগমারা উপজেলা পরিষদ ভবন সমপ্রসারণ ও হলরুম নির্মাণ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কসহ ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মহানগরীর কোর্ট ঢালান নবীগঞ্জ এলাকায় ৩১.৬৩ একর জমির ওপর ২৮১.৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হবে। এতে ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

পুলিশকে আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই: একই দিন সকালে সারদা পুলিশ একাডেমিতে ৩৪তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের ২৬ জন নারীসহ ১৪১ জন নবীন সহকারী পুলিশ সুপারের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশকে আমি সবসময় আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই। দেশের প্রচলিত আইন, সততা এবং নৈতিক মূল্যবোধই হবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথনির্দেশক। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী-চৌকস, পেশাদার, দক্ষ ও জনবান্ধব পুলিশ সার্ভিস গঠনে আমাদের সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

চারঘাট সংবাদদাতা জানান, এরআগে প্রধানমন্ত্রী ব্যাচের শিক্ষাসমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি বেষ্ট একাডেমিক শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাশকুর রহমান, অশ্বারোহণে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মো. বেলাল হোসেন এবং সর্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সন্দীপ সরকারকে পুরস্কৃত করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।