স্টাফ রিপোর্টার: মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার একটি মাজার থেকে দুই নারীর জবাই করা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর থানার ওসি মো. আলমগীর হোসাইন জানান, ভিটিকান্দি গ্রামের হজরত শাহ সুলায়মান ন্যাংটার মাজারে বুধবার ভোরের দিকে বা মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন – মাজারের খাদেম আমেনা বেগম (৭০) ও তাইজুন খাতুন (৪৮) নামে এক ভক্ত। আমেনা বেগমের বাড়ি গজারিয়া উপজেলার ঝাপটা গ্রামে, তাইজুনের বাড়ি বকচর গ্রামে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাজারের জমির মালিক মাসুদ কোতয়াল (৫৫) এবং ওই এলাকার বাবু (২৫) নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
ওসি মো. আলমগীর সাংবাদিক-দের বলেন, সকালে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মাজারের ভেতরে দুই নারীর লাশ দেখতে পায়। তাদের গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। আলমগীর হোসাইন আরো জানান, যৌন সংক্রান্ত বা জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এই হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে যৌন সংক্রান্ত আলামত পাওয়া গেছে। জমি-জমা, টাকা উত্তোলন এবং মাজারের নিয়ন্ত্রণ- এসব বিষয়কেও সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ লাশ দুটি মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় তাদের হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মানিব্যাগসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। আর খুনিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে খাদেমের স্বজনদের আহাজারি ও মাজার ঘিরে বিপুলসংখ্যক লোকের উপস্থিতি দেখা গেছে। মূলত মাজারটি ক্ষেতের মাঝে বালু ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে। টিনের একটি ছোট ঘরের এক পাশে মাজার আর একপাশে খাদেম আমেনা একা থাকতেন। মাজারের আশপাশে বসতি ছিল কম। অল্প কিছুদিন যাবত্ কিছু বাড়ি-ঘর তৈরি হয়েছে। স্থানীয় ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোসনে আরা জানান, মাজার প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিহত আমেনা খাতুন মাজারটির দেখভাল করতেন। প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে ভক্তরা আসে। জিকির হয়। গান বাজনা হয়। আবার চলে যায়। প্রতি চৈত্র মাসে এখানে ওরসও হয়। এই মাজারে কারা আসে কারা যায় তা তিনি জানেন না বলে জানান। মাজারের জমির মালিক মাসুদ কোতয়াল জানান, বুধবার সকালে তার বাড়ি শিলমন্দির থেকে মাজারে গরুর জন্য ঘাস কাটতে আসেন তিনি। এসে দেখেন দরজা খোলা এবং গলা কাটা অবস্থায় লাশ দুটো পড়ে আছে। ঘর থেকে রক্ত গড়িয়ে বাইরে পড়ছিল। এটা দেখে তিনি পুলিশে খবর দেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর তিনি এই মাজার প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে তার একটা অসুখ ছিল। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও তিনি ভালো হচ্ছিলেন না। পরে মাজারে শায়িত বারেক লেংটার উসিলায় তিনি ভালো হন। মাজারের আশপাশের স্থানীয়রা জানান, মাজারকে ঘিরে চারপাশে রীতিমত মাদকের আড্ডা বসতো। এর মধ্যে তরুণরাই সংখ্যায় বেশি ছিল। প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে গান বাজনা হতো। মাজারে নারী পুরুষ সব ধরনের ভক্তই আসতো। আমেনার ছেলে মো. জাবেদ জানান, মঙ্গলবারও আমার সাথে মা’র কথা হয়েছিল মোবাইলে। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে জানা নেই। তাইজুনের ছেলে কফিল উদ্দিন ও মেয়ে রুপজান জানান, আমাদের বাড়ি সদর উপজেলার বকচর গ্রামে। তবে মা ঢাকার শ্যামপুর থাকতেন। মনের শান্তির জন্য তিনি এখানে প্রায়ই আসতেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মাজারে আসেন। এই মাজারের তিনি একজন ভক্ত।