মেহেরপুর অফিস: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মেহেরপুরের দুটি আসন থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় পাটি ও ইসলামি আন্দোলনের একাধিক নেতা নানা প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রার্থী হতে লবিং তদবির শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি এলাকায় জনসংযোগ করে চলেছেন। এতে এক ধরনের উত্সাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মেহেরপুর দুটি আসনেই আগাম নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সাধারণ ভোটারদের দাবি সত্যিকার দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে হবে। তবে পর্যবেক্ষকদের ধারণা এবার মেহেরপুরের দুটি আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি ভোট যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূতিকাগার দেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর খ্যাত ঐতিহাসিক জেলা মেহেরপুর। এ জেলার জাতীয় সংসদীয় আসন সংখ্যা-দুইটি। উপজেলার সংখ্যা তিনটি। মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলা মিলে মেহেরপুর-১ আসন এবং গাংনী উপজেলাটি মেহেরপুর-২ আসন নামে ভাগ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক জেলা হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুরের দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের জয়লাভ করার সম্ভাবনার সম্মানজনক আসন হিসেবে বিবেচনা করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির ঘাঁটি। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুরের- দুইটি আসনেই জয়লাভ করবে বিএনপি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মেহেরপুর ও গাংনীতে সব দল সব গ্রুপ নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে মিটিং, মিছিল, পথসভা, জনসংযোগ করছেন।
গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। ওই কমিটি দিয়েই চলছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ বছর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল না হওয়াই দলটির মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে চরমে। এক্ষেত্রে বিএনপির মধ্যে মাঝে মাঝে দ্বন্দ্বের ফলে দু’ভাগে বিভক্ত হলেও গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস পূর্বেই পুনরায় এক হয়ে একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নজিরও রয়েছে। আগামী নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে দলের সব নেতারা জানান।
তবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী গাংনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আহম্মদ আলী দলকে সুসংগঠিত করতে প্রতিনিয়ত তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ২০০৪ সালে ছাত্রদলের হাতে হামলার শিকার, ২০০১ইং সালে বিএনপির সরকার হটাও আন্দোলনে অন্যতম নেতা ও গাংনী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী সাবেক মেয়র আহম্মদ আলীকে দলের প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেবেন এমন প্রত্যাশা করছেন। আহম্মদ আলী জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের জন্য ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা হাইব্রিড নেতাদের পরিহার করতে কোনো দ্বিধাবোধ করবেন না।
এদিকে বিএনপির দলীয় পদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহের ও আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ বা গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনসহ দলের সিনিয়র-জুনিয়র নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপির কয়েক’শ নেতাকর্মী রাজনৈতিক মামলা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ২০১৩-১৪ইং বছরের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময়ে শতাধিক নেতা-কর্মীও নামে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়। বর্তমান ওইসব মামলা বিচারাধীন। এ সব মামলায় ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আসামি রয়েছেন। আগামী নির্বাচনের আগেই মামলাগুলোর রায়ে সাজা হলে বিপাকে পড়বে নেতাকর্মীরা। ফলে দল নেতা শূন্য হয়ে পড়বে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলাকে ভয় পায় না। এ ধরনের মিথ্যা মামলায় সাজা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের অধিকার পেলে দলের জয় নিশ্চিত।