দলটা এতো বাজে তো নয়!

মাথাভাঙ্গা মনিটর: উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে ৯-০ গোলে হারের পর একটা প্রশ্ন উঠছেই—থাইল্যান্ডের চনবুরিতে কী নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পেরেছে বাংলাদেশের মেয়েরা? এক বছর আগেই যারা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের বাছাইপর্বের ম্যাচগুলো দেখেছেন, তাদের মধ্যে রাজ্যের বিস্ময়। কৃষ্ণা-স্বপ্নাদের দলটা এতো বাজে নয় যে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারবে না। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ছিলো কোনো সন্দেহ নেই। হারের বিষয়টি মাথায় ছিলো সবারই। কিন্তু ব্যবধানটা বিস্ময় তৈরি করছে।

উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে মাঠে নাকি ঠিকমতো দৌড়াতেই পারেনি মেয়েরা। হোঁচট খেয়ে পড়েছে বারবার। যে দল বাছাইপর্বে ইরান, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরকে উড়িয়ে দিয়েছে, তারা কিভাবে ভেঙে পড়লো একটু ঝাঁকুনিতেই?
প্রস্তুতির ঘাটতি ছিলো না একেবারেই। গত এক বছরে এই দলটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরে। এর মধ্যে জাপান সফরেই গেছে দুইবার। ২২টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা দলের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগই নেই। থাইল্যান্ডে প্রথম ম্যাচেই মনে হলো সব প্রস্তুতি গুলিয়ে খেয়ে বসে আছে দল। ক্লান্তিরও কোনো কারণ ছিলো না। ২২টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেললেও সেই ধকল কাটিয়ে ওঠার সব সুযোগই পেয়েছে তারা। থাইল্যান্ডে যাওয়ার বিমানযাত্রাও মোটেও দীর্ঘ নয়। তাহলে? গতকাল ম্যাচের দিন সকালে এক ঘণ্টা অনুশীলন করেছিল দল। ম্যাচের দিন সকালে অনুশীলন সেশন ফুটবলে হয়েই থাকে। এমনকি পুরুষদের ফুটবলেও হয়। সেটি রাতে ম্যাচ হলে। কিন্তু তাই বলে ম্যাচ শুরু হওয়ার মাত্র ৭ ঘণ্টা আগে অনুশীলন করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল, সেটি নিয়ে নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠছেই। সকালের অনুশীলনে যথেষ্ট ধকল গেছে দলের ওপর দিয়ে। থাইল্যান্ডের আবহাওয়া খুব আর্দ্র। ৩২-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অনুশীলনে মেয়েরা সব শক্তিই হারিয়ে বসেছিলো। এর পাশাপাশি হোটেল থেকে অনুশীলন মাঠে যাওয়া-আসা মিলিয়ে আরও এক ঘণ্টা ব্যয় করা হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার মতো শক্তিশালী একটি দলের বিপক্ষে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ছাড়াই খেলতে নেমেছিলো দল। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।

ম্যাচের দিন অনুশীলন হতেই পারে। কিন্তু সেটি অবশ্যই হবে ‘লো ইন্টেনসিটি’র। খেয়াল রাখতে হবে খেলোয়াড়দের পালস রেট যেন কোনোমতেই ১৪০-১৪৫-এর ওপর না ওঠে। খেলার আগে বিশ্রাম পেতে হবে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা! সবকিছুর পর দেখতে হবে আবহাওয়ার অবস্থা। উষ্ণ আবহাওয়া হলে অনুশীলন না হওয়াই উচিত। আরও একটা ব্যাপার দেখতে হবে, খেলোয়াড়েরা ম্যাচের দিন সকালে অনুশীলনে অভ্যস্ত কি না! অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে আরও সাবধান হওয়াটাই ছিলো বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে অনেকেই দায়ী করছেন বাফুফের কোচিং অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলিকে। থাইল্যান্ডে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্ট নাকি স্মলিকে অনুশীলন না করানোর অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি শোনেননি। স্মলি নিজে অবশ্য ম্যাচের সকালে অনুশীলনে কোনো সমস্যা দেখেন না, ‘ম্যাচের দিন সকালে অনুশীলন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, সমালোচনা হচ্ছে। এসব আমার কানেও এসেছে। কিন্তু পরিষ্কার করেই বলছি, গতকাল সকালে দল অনুশীলন বলতে যা বোঝায় সেটি করেনি। সকালে অল্প সময়ের একটা ট্যাকটিক্যাল সেশন ছিলো। বিশ্বের অনেক দলই সন্ধ্যায় ম্যাচ থাকলে সকালে অনুশীলন করে।