গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামের এনামুল হক ললো হত্যা মামলার আসামিপক্ষের লোকজনের ফসল তছরুপ করা হচ্ছে। বাদীপক্ষের লোকজনের বাঁধার কারণে বিনষ্ট হয়েছে ক্ষেতের পাট ও ধান। জোরপূর্বক কেটে নেয়া হয়েছে ১২ বিঘা জমির আউস ধান। লুটে নেয়া হয়েছে পুকুরের মাছ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুলাই নওপাড়া গ্রাম থেকে বাড়ি ফেরার পথে এনামুল হক ললো দুর্বৃত্তদের অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত হন। পরদিন ভোরে রাজশাহী মেডিকেলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পরিবার থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমানসহ তার পরিবার ও পক্ষের বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। এর আগের একটি সংঘর্ষ ও ললো হত্যা মামলার মধ্যদিয়ে গ্রামের পূর্ববিরোধের বিষয়টি ঘুরে ফিরে সবার সামনে আসে। নিহত ললোর ভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা আজমাইন হোসেন টুটুলের সাথে আতিয়ারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিরোধের কারণে তাদের সম্পর্ক ছিলো দা-কুমড়ো। ললোর মৃত্যুর পর আজমাইন হোসেন টুটুল ও তার পক্ষের লোকজন প্রতিশোধের আশায় মত্ত। আজন্মা শত্রুতের শায়েস্তা করতে হিং¯্র হয়ে ওঠে। হত্যা মামলার আসামি হয়ে আতিয়ার রহমানসহ তার পক্ষের লোকজন আত্মগোপন করে। টুটুল মেম্বার পক্ষের লোকজনের মারমুখি আচরণে আসামি না এমন লোকজনও বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ফলে বাড়ি ঘরের জিনিসপত্র ও ক্ষেতের ফসল অরক্ষিত হয়ে পড়ে।
অভিযোগে জানা গেছে, আতিয়ার রহমান পক্ষের লোকজনের প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে পাট ছিলো। বেশ কয়েকজন পাট কেটে জাগ দিয়েছিলেন। বাধার কারণে গ্রামের ডোবা-নালায় জাগ দেয়া পাট পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কর্তন করা হয়নি এমন কিছু জমির পাট ক্ষেতেই শুকিয়ে গেছে। অপরদিকে ১০-১২ বিঘা জমির আউস ধান পেকে গেলেও তা কর্তন করতে পারেননি আতিয়ার পক্ষের লোকজন। আজমাইন হোসেন টুটুল মেম্বারের লোকজন ক্ষেত থেকে ধান কেটে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছে। এছাড়াও প্রায় ২০ বিঘা জমির আমন ধান বিনষ্ট করা হচ্ছে। ক্ষেতমালিক ধানের ক্ষেতে সার-কীটনাশক দিতে পারেননি। প্রয়োজনীয় পরিচর্যাও হয়নি। বাদীপক্ষের লোকজন এখন তাদের গরু দিয়ে ধান খাইয়ে দিচ্ছে। আব্দুল খালেকের পুকুরের মাছ লুটে নেয় বাদীপক্ষের লোকজন। ওই পুকুরে ৮/৯ লাখ টাকার পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করা যেতো বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে গতকাল সোমবার আজমাইন হোসেন টুটুলের মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এতোকিছুর পরেও মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। তবে বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন।
ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, টুটুল মেম্বারপক্ষের লোকজন রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মাঠে ও গ্রামে পাহারা দিচ্ছে। তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার উপক্রম করেছেন। ফলে আসামিপক্ষের লোকজন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট ও পরবর্তী ফসল আবাদ করতে না পেরে আসামিপক্ষের পরিবার খাদ্য সংকটে পড়েছে। পরিবারের উপার্জনক্ষ ব্যক্তিরা বাড়িছাড়া হওয়ায় অর্থ সংকটে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় নিয়েও গভীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বাদীপক্ষের অব্যাহত হুমকি ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহলের কারণে শঙ্কায় জীবনযাপন করছেন আসামিপক্ষের লোকজন।
আসামিপক্ষের কয়েকজন বলেন, আজমাইন হোসেন টুটুল বিএনপি নেতা। তার বংশের সব লোকই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। গত বছর আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের সাথে লিয়াজো করে আওয়ামী লীগ বনে যায় আজমাইন হোসেন টুটুল। ফলে ওই গ্রামের প্রকৃত আওয়ামী লীগ পক্ষ আতিয়ার হোসেনের লোকজন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে পড়ে। আওয়ামী লীগ সেজে টুটুল মেম্বার গ্রামের আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। ক্ষমতাসীন দলের কয়েক ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে স্থানীয়ভাবে আতিয়ার পক্ষের লোকজনের ওপর চরম নির্যাতন শুরু করে টুটুল পক্ষের লোকজন।