মাথাভাঙ্গা মনিটর: গোলকিপার গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসলে সাধারণত স্ট্রাইকারদের পা কাঁপে। মুহূর্তেই উল্টো-পাল্টা করে ফেলেন অনেকেই। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন কেবল দক্ষ স্ট্রাইকাররাই। গোলকিপার পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। সতীর্থদের কাছ থেকে বলে পেয়ে সেটি পায়ে নিয়ে মাথা গরম না করে গোলে প্লেস করার ব্যাপারটি সাধারণ বাংলাদেশের ফুটবলে খুব বেশি দেখা যায় না। এক সময় শেখ মোহাম্মদ আসলাম কিংবা ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবদের পা থেকে এমন গোল দেখা গেলেও সেটি এখন প্রায় বিরল এক দৃশ্য। স্ট্রাইকার সংকটের এই সময়ে নারী অনূর্ধ্ব-১৬ দলের দুই ফুটবলার আশ্চর্য ব্যতিক্রম। কৃষ্ণা রানি সরকার আর সিরাত জাহান স্বপ্না- এরা গোল করতে জানে। দুর্দান্ত সব গোলে দর্শকদের মোহাবিষ্ট করে দিতে পারে। থাইল্যান্ডের চনবুরিতে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে এই দুই স্ট্রাইকার হতে পারে বাংলাদেশের তুরুপের তাসই। গত সাফ মহিলা ফুটবলে বাংলাদেশে রানার্সআপ হয়েছিল। ভারতের শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত সেই প্রতিযোগিতায় জাতীয় দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন সিরাত জাহান স্বপ্না। রংপুরের মেয়ে স্বপ্না দুর্দান্ত সব গোলে দৃষ্টি কেড়েছিল ভারতীয় দর্শকদের। সেমিতে তাঁরই হ্যাটট্রিকে মালদ্বীপকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে বাংলাদেশ ভারতের কাছে ৩-১ গোলে হারলেও স্বপ্নার দারুণ একটা গোল সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলো। ভারতীয় দলের গোলকিপার অনিতা চৌহানকে বোকা বানিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় স্বপ্না যে গোলটি করেছিল, সেটি ভারতের জয় ছাপিয়েও আলোচিত হয়েছিলো শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে।
সেই স্বপ্না অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে আরও দুর্দান্ত। থাইল্যান্ডে চূড়ান্তপর্বের প্রস্তুতি হিসেবে গত এক বছরে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রচুর ম্যাচ খেলেছে। জাপানে দুইবার সফর করেছে, সফর করেছে দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন। এই সফরগুলিতে প্রায় ২০-১৫টি ম্যাচে স্বপ্নার পা থেকে এসেছে ১৬টি গোল। স্বপ্না যেন আমাদের এক ‘গোল মেশিন’। স্বপ্নার মতোই বাংলাদেশের আরেক গোল মেশিন কৃষ্ণা রানি সরকার। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের বাছাইপর্বে কৃষ্ণার পা থেকে এসেছিলো একের পর এক গোল। কয়েকটি গোলে এতোটাই অসাধারণ ছিলো, যা দেখে অভিজ্ঞ ফুটবলপ্রেমীরা অনেকেই বলাবলি করছিলেন, এমন কুশলতা পূর্ণ গোল কোনো বাংলাদেশি স্ট্রাইকারের পা থেকে তাঁরা কোনো দিন দেখেননি। বাছাইপর্বে একটি হ্যাটট্রিকসহ কৃষ্ণা করেছিলেন ৮ গোল। টাঙ্গাইলের এই মেয়ে কেবল গোলই করেন না, সতীর্থদের দিয়ে গোল করানও। বাছাইপর্বে প্রতিপক্ষের ওপর বাংলাদেশ যেভাবে ছড়ি ঘুরিয়েছিলো, তাতে কৃষ্ণার ছিলো বড় অবদান। এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে সামনে থেকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে স্বপ্না-কৃষ্ণারাই। বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানি ছোটনের ভরসা এই স্বপ্না-কৃষ্ণারাই। এই দুজন শুধু গোলই করে না, গোলের বলও বানিয়ে দেয়। অ্যাটাকিং থার্ডে দৌড়-ঝাঁপ করে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ব্যস্ত রাখে, সে সময় সতীর্থদের জন্য খেলাটা হয়ে যায় সহজ। এ ছাড়া মাঠে এই দুজনের পরিশ্রম দেখে মনে হয়, তারা যেন দমের বাক্স নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই দুজনকে দিয়েই তাই বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে উত্তর কোরিয়া-জাপান-অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাজিমাত করতে। থাইল্যান্ডে স্বপ্না-কৃষ্ণারা জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় এখন গোটা দেশ।