গাংনীতে সর্প দংশনে নুরু কসাইয়ের মৃত্যু ॥ আবারও কথিত ওঝার দৌরাত্ম্য

গাংনী প্রতিনিধি: বিষাক্ত সাপের ছোপলে প্রাণ গেলো নুরু ইসলাম ওরফে নুরু কসাই (৫৫) নামের এক ব্যবসায়ীরা। গতকাল বুধবার ভোরে নিজ বাড়িতে সর্প দংশনের পর এক ওঝার পানিপড়া খাওয়ানো হয়। পরে অবশ্য কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। নুর ইসলাম ওরফে নুর ইসলাম গাংনী পৌরসভাধীন পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের মৃত আলা উদ্দীনের ছেলে। তিনি গাংনী মাংস বাজারের মাংস বিক্রেতা।
নুর ইসলামের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মালসাদহ দোহাপাড়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে মঙ্গলবার রাত্রিযাপন করেন নুরু। ভোরের দিকে তার বাম হাতের আঙ্গুলে সর্প দংশন করে। পরিবারের লোকজন ঘরের মধ্য থেকে সাপটিকে আটক করতে সক্ষম হয়। সর্প দংশনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বিষ মুক্ত করার উপায় খোঁজেন পরিবারের লোকজন। অন্ধ বিশ^াস ও আর কুসংস্কারের ঘেরা কয়েকজনের সিদ্ধান্তে নেয়া হয় ধানখোলা গ্রামের কথিত ওঝা হাশেম আলীর কাছে। বীরদর্পে এক গ্লাস পানি পড়া খাইয়ে বিষ মুক্ত করার দাবি করেন হাশেম আলী।
এদিকে পানিপড়া খেয়েও নুরুর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। সর্প দংশনের পর থেকেই তার বুকের বাম দিকে যন্ত্রণা করছিলো। বুকের মধ্যে নিঃস্বাস যেন আটকে যাচ্ছিলো। অবস্থা বেগতিক দেখে হাশেম আলী ওঝার (স্থানীয় কবিরাজ নামে পরিচিত) কাছ থেকে দ্রুত গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তবে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে অ্যান্টি¯েœক ভেনম দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।
পারিবারিকসূত্রে আরো জানা গেছে, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে অ্যান্টি¯েœক ভেনম দিলে নুরু সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু তার অ্যাজমা থাকায় স্বাসকষ্ট কমেনি। সর্প দংশনের চিকিৎসা করার প্রয়োজন ছিলো না। তবে বুকের চিকিৎসার জন্য পরিবার থেকে তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। রাতেই নিজ গ্রামের কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে ওঝার চিকিৎসার বিরুদ্ধে গ্রামের যুবসমাজ প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। এর আগে শুক্রবার একই পাড়ার এক নারীর সর্প দংশনের পর ওঝার পানি পড়া খেয়ে মৃত্যু হয়। ওঝার চিকিৎসায় সময় পার করার ফলে হাসপাতালে নেয়ার সুযোগ দেয়নি। সর্প দংশনে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে ওঝার কাছে না গিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় কয়েক যুবক।