কোনো মূল্যে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসন করা অপরিহার্য

বিভিন্ন সময়েই মিয়ানমারের আরাকান থেকে রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন হলে তারা বাংলাদেশে ছুটে আসে, আর মানবিক কারণে বাংলাদেশও তাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়। প্রসঙ্গত, কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের শেষ দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে নতুন করে ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও সরকারি ভাষ্য থেকে জানা যায়। সম্প্রতি যখন রোহিঙ্গা ইস্যুটি আরও ভয়ানক আকার ধারণ করেছে, তখন যতো দ্রুত সম্ভব সৃষ্ট পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান জরুরি। গ্রামের বাড়িঘর পোড়ানোর তাণ্ডবে ব্যস্ত মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, রক্ত আর পোড়ানোর নেশায় মরিয়া মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়েছে একদল উন্মত্ত তরুণ। তারা সেনা-পুলিশের উপস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের খুন করছে! গত চার দিনে টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩৩টির বেশি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। হুড়োহুড়ি করে নাফ নদী পারাপার করতে গিয়ে গত চার দিনে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা ডুবে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এমন পরিস্থিতির শেষ কোথায়? আর যখন মিয়ানমারে এতো বড় নিষ্ঠুরতার ঘটনা চলছে, তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনও ততোটা সোচ্চার হয়নি এবং প্রতিবাদও তেমন জোরালো নয়।

গত বছরের অক্টোবর এবং এ বছরের ২৪ আগস্টের সেনা অভিযানের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসেছে। আর গত অক্টোবরের পর বাংলাদেশে আসে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা এবং এবার সংখ্যাটি আগেরবারের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যেভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের খবরাখবর পত্রপত্রিকাসহ নানাভাবে জানা যাচ্ছে তা ভয়ানক এবং অমানবিক। যেকোনো মূল্যে এ সঙ্কট নিরসন করা অপরিহার্য। রোহিঙ্গাদের এ ভয়াবহতা সামনে রেখে বাংলাদেশের সামর্থ্যও বিবেচনা করতে হবে। কেননা বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ, এছাড়া প্রায় চার দশক ধরে বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণের ভার বহন করছে। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি, যেন স্থায়ী সমাধান হয়।

বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষ আরও সভ্য হচ্ছে এমনটি যখন বলা হয়, তখন এভাবে রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হবে, তাদের লাশ ভাসবে নদীতে, শিশুর পরিণতি হবে ভয়ানক মৃত্যু এমনটি গ্রহণযোগ্য নয়। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসা অব্যাহত থাকলে সেটাও স্থায়ী সমাধান নয়। সম্প্রতি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। মালদ্বীপ মিয়ানমারের সাথে সব রকম অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসনে বাংলাদেশ প্রয়োজনে জাতিসংঘের সহযোগিতা চাইতে পারে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ সমস্যা স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বিশ্ব নেতৃত্বকে এগিয়ে আসা জরুরি। জাতিসংঘ, ওআইসি, বিভিন্ন মুসলিম দেশসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের সাথেও ব্যাপক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া দরকার। আমরা বলতে চাই, এর আগে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রতিবেশীসুলভ মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে বারবার। কিন্তু প্রয়োজন এর স্থায়ী সমাধান। সর্বোপরি, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে যথাযথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।