হাজি মোজাম্মেল হকের মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গায় নেয়া হচ্ছে আজ

বাদ আছর টাউন মাঠে নামাজে জানাজা শেষে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত
স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি বঙ্গজ-তাল্লু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজি মো. মোজাম্মেল হকের মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গায় নেয়া হচ্ছে আজ বুধবার। আজই বাদ আছর চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে। পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়ে নামাজে জানাজায় ও দাফনে শরিক হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া চেয়েছেন।
জানা গেছে, হাজি মোজাম্মেল হকের মরদেহ আজ বুধবার সকালেই ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে নেয়া হবে জাতীয় সংসদ প্লাজায়। সেখানে সাড়ে দশটায় নামাজে জানাজা শেষে মৃতদেহ নেয়া হবে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে। চুয়াডাঙ্গা ইমার্জেন্সি সড়কস্থ নিজ বাড়িতে মৃতদেহ কিছুক্ষণ রাখার পর নামাজে জানাজার উদ্দেশে টাউনফুটল মাঠে নেয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাজা সম্পন্ন করার পরই দাফনের জন্য নেয়া হবে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে।
চুয়াডাঙ্গার কৃতীসন্তান বহু শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিন তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালনকারী হাজি মোজাম্মেল হক গতপরশু সোমবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। ব্যাংককের হাসপাতাল থেকে দেশে নেয়ার পর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ৫ মেয়ের মধ্যে ৪ মেয়েসহ বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মারা যাওয়ার সময় দু ছেলে রফিকুল হক তাল্লু ও মাহবুব উল হক মুনুœ দেশের বাইরে থাকায় কবে কখন মৃতদেহ নিজ এলাকা চুয়াডাঙ্গায় নেয়া হবে তা সিদ্ধান্ত নিতে লেগে যায় একটি দিন। মাহবুবুল হক মুন্নু গতকাল বিকেলে ও রফিকুল হক তাল্লু দেশে ফেরেন সন্ধ্যায়। এরপরই ছোট ছেলে আতিকুল হক মিথুনকে সাথে নিয়ে তিন ভাই তাদের পিতার দাফনসহ যাবতীয় করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। সংশ্লিষ্টসূত্র এসব তথ্য জানিয়ে উপরোক্ত তথ্য জানান। আতিকুল হক মিথুন মাথাভাঙ্গার মাধ্যমে সকলের নিকট দোয়া কামনা করেন।
গতপরশু মৃত্যু খবর জানাজানি হলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও শোক প্রকাশ করে শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এর একদিন পর গতকাল জেলা বিএনপির পক্ষে আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস স্বাক্ষরিত শোকবার্তায় বলা হয়, হাজি মো. মোজাম্মেল হক ছিলেন জাতীয়তাবাদী শক্তির উজ্জ্বল নক্ষত্র। একই শোকবর্তায় সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এমএম শাহজাহান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক হাজি আব্দুল খালেক, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি আওরঙ্গজেব বেল্টু, জেলা বিএনপি সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হবিও শোক জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: মোজাম্মেল হক ১৯৩০ সালের ১৫ জানুয়ারি নদীয়া জেলার তিওরখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. তিনু শেখ, মা সরোজিনী বেগম। গ্রামের মক্তব, মহেশগঞ্জ এম.ই স্কুল, বকুলতলা হাইস্কুল ও কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে পড়ালেখা করেন। দেশভাগের পর চুয়াডাঙ্গায় এসে দর্শনা কেরুতে ৬৭ টাকা বেতনে ডিস্ট্রিলারি এজেন্ট হিসেবে চাকরি নেন। ১৯৫৩ সালে ৩৯০ টাকায় মুনসেফ আদালতের ১০৫ বিঘার একটি বিল নিলামে কিনে পূর্ণ উদ্যোমে প্রতিষ্ঠা লাভের প্রচেষ্টা নেন। এই বিলের আয়ের টাকায় তিনি জুতোর ব্যবসা ও ঠিকাদারি শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকার ফকিরাপুলে মোটরসাইকেলের দোকান দেন। তিনি পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বঙ্গজ লিমিটেড নামে চুয়াডাঙ্গাতে বিস্কুট ফ্যাক্টরি চালু করেন। এই প্রকল্প তাকে শিল্পপতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৮১ সালে তালু স্পিনিং মিল চালু করেন।
মোজাম্মেল হক চুয়াডাঙ্গা শিল্প বণিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন (সূত্র: ‘চুয়াডাঙ্গা চরিতাভিধান’ রাজিব আহমেদ)।