মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুরে কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবসা মরসুমি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। সরকার নির্ধারিত দরের তোয়াক্কা না করে মনগড়া দরে চামড়া কিনেছেন এসব ব্যবসায়ীরা। ফলে চামড়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অপরদিকে চামড়া ক্রয়ে ট্যানারি মালিকদের আগ্রহ কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২১ আগস্ট এ বছরের কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে। এতে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকা। অপরদিকে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১৫ থেকে ১৭ টাকা। গত বছর জেলার বিভিন্ন বাজারে ৩৫-৪০ হাজার পিস খাসির চামড়া ও ১৫-২০ হাজার পিস গরুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হয়। যার কিছু বেশি পরিমাণ এ বছর ক্রয়-বিক্রয় হতে পারে বলে চামড়া ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে।
চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে মরসুমি ব্যবসায়ীরাই ঠিক করছেন চামড়ার দর। গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোরবানির সময় হয় ওঠেন চামড়া ব্যবসায়ী। তারাই গ্রাম থেকে চামড়া কিনে বাজারে নিয়ে আসছেন। কোরবানির পশু মালিকদের কম সংখ্যক সরাসরি চামড়া বিক্রি করতে আসেন। ফলে গ্রামের মরসুমি ব্যবসায়ীরা পাল্লাপাল্লি দিয়ে চামড়া কিনতে গিয়ে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে কিনে থাকেন। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে চামড়ার বাজারে। বেশি দর ছাড়া চামড়া কিনতে পারছেন না স্থায়ী এসব চামড়া ব্যবসায়ীরা।
মেহেরপুর শহরের বড় বাজারে চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব বলেন, মরসুমি চামড়া বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্যে আমরা অসহায়। তারা গ্রাম থেকে বেশি দরে চামড়া কিনে নিয়ে আমাদের কাছে বিক্রি করছেন। চামড়া ব্যবসা করতে হলে বেশি দরেই মরসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে।
গাংনী বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী তুহিন আহম্মেদ বলেন, বর্গফুট হিসেবে আমরা চামড়া ক্রয় করতে পারছি না। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, ট্যানারি মালিকরা এখনো দর ঠিক করেননি। তাই আন্দাজ মতো দরে ক্রয় করছি। এই চামড়া কবে কি দামে বিক্র করতে পারবো তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
গাংনী বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চামড়া কেনাবেচা করেন আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, গত বছর ২৭ লাখ টাকার চামড়া বিক্রি করেছিলাম নাটোরের এক ব্যবসায়ীর কাছে। ঈদের আগে ওই টাকা থেকে মাত্র এক লাখ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছি। তাই চামড়া কিনতে পারছি না। তবে ধার-দেনা করে কোনোরকম ব্যবসা চালাচ্ছি। তবে কোরবানির পশু মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। সরকার নির্ধারিত দরের অনেক কম দরেই তারা চামড়া বিক্রি করছেন বলে জানালেন কয়েকজন। তাদের মতে, ছাগলের চামড়া প্রতিটি ৫০-৭০ টাকা এবং গরুর চামড়া প্রতিটি ৫০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করলে আরও বেশি দর পাওয়া সম্ভব ছিলো। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বর্গফুট হিসেবে চামড়া ক্রয় করতে নারাজ। এ কারণে ব্যবসায়ীদের আন্দাজ করা দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন কোরবানি পশুর মালিকরা।