হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার: জয়নাল আবেদীনের মৃতদেহ বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটি তার নিজ বাড়ি হাঁপানিয়ায় পৌঁছায় ভোরে। এ সময় নিকটজনদের আহাজারিতে গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জয়নাল আবেদীন গুলিতে নিহত হয়েছে বলে জানান নিকজনেরা। তারা হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে এ মামলার আসামিরাই শুধু নয়, তাদের বাড়ির লোকজনও বাড়ি ছেড়েছে। ঘটনার পর পরশু পর্যন্ত পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ মামলার আসামিদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে চিৎলা ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান।
আলমডাঙ্গা উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জয়নাল আবেদীনের নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গ্রামের ঈদগা মাঠে তার জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি, আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আ.লীগের সহসভাপতি খুস্তার জামিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, মাসুদ উজ্জামান বিশ্বাস লিটু, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাবেক আলমডাঙ্গা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, যুবলীগ নেতা নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের বহু নেতাকর্মী অংশ নেন। এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও আলমডাঙ্গা সার্কেল) তরিকুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা জানাজায় অংশ নেন।
জানাজায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে যারা মানুষ খুন করছে তারা প্রকৃত আওয়ামী লীগের নয়। তাদের ইতিহাস ঘাটলে বিএনপি ও জামাতের গন্ধ পাওয়া যাবে। চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করছে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারা আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মীদের খুন করছে। এরাই এক সময় এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলো। পরে তাদের ভালো হওয়ার সুযোগ দেয়া হলেও তারা আবারও হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া নিহত জয়নাল আবেদীনের সন্তানদের দায়িত্ব নেবেন বলেও জানান তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন অভিন্ন দাবি করে বলেন, আইনের মাধ্যমেই তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও আলমডাঙ্গা সার্কেল) তরিকুল ইসলাম ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন মাও. আব্দুল ওহাব। পরে স্থানীয় কবরস্থানে নিহত জয়নালের দাফন সম্পন্ন হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাদ আছর চিৎলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জয়নালের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এদিকে হাঁপানিয়া গ্রামবাসীর দেয়া তথ্যতে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর বিষয় বেরিয়ে এসেছে। গ্রামবাসীরা জানান, চিৎলা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল ইসলাম মন্টুকে খুন করাই ছিলো হামলাকারীদের প্রধান উদ্দেশ্য। তারা প্রথমে গুলি করে ব্যর্থ হয়। পরে শক্তিশালী বোমা মারতে গেলে মন্টুর পাশের একজন তা ধরে ফেলে বাইরে ফাঁকা স্থানে ফেলতে গেলে বোমাটি তাদের পাশেই বিস্ফোরিত হয়। সর্বশেষ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে গেলে মন্টু সরে আসতে গিয়ে ওই অস্ত্রের আঘাত মুখে লেগে পড়ে যায়। মন্টুকে হত্যা করে এলাকায় রাজত্ব করাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে হাঁপানিয়া গ্রামে ঈদের জামাতে উসকানিমূলক ও রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য ইন্তাদুল ও তার লোকজনের ধারালো অস্ত্রের আঘাত, বোমা ও গুলিতে উভয় পক্ষের ২৩ জন আহত হন। পরে ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন।ওই মামলায় চিৎলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পরে ৮ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। বাকীরা বিভিন্ন স্থানে পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও আলমডাঙ্গা সার্কেল) তরিকুল ইসলাম। এদিকে ওই ঘটনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশি টহল জোরদার থাকলেও ৪ ভাগের ৩ ভাগ নারী পুরুষই গ্রামছাড়া।
গতকাল প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আসামির তালিকায় চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে উল্লেখ করা হলেও তা ছিলো তথ্যগত ত্রুটি। কৃষক লীগের চুয়াডাঙ্গা সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান কবির ওই মামলার আসামি নন। আসামি জিল্লুর রহমান জিল্লু। তাকে আসামি করা হলে তার পক্ষের লোকজন বলেছেন, তিনি ঈদের নামাজ আদায় করলেন কোথায়, আর মারামারি হলো কোথায়। অথচ রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে তাকে রাখা হয়েছে আসামির তালিকার প্রথমে।