দর্শনাকে উপজেলাকরণের ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন তা করবো

 

ঢাকাস্থ দর্শনা পরিবারের আয়োজনে আলোচনাসভায় এমপি টগর
দর্শনা অফিস: যেকোনো মূল্যে দর্শনাকে উপজেলায় উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এ আন্দোলনে দর্শনাসহ ৬ ইউনিয়নবাসীই নয়, আন্দোলনের শুরু থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন ঢাকাস্থ দর্শনা পরিবারের সদস্যরা। ঢাকায় দফায় দফায় দাবি আদায়ের বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। দর্শনায় আলোচনাসভার মাধ্যমে আন্দোলনকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিলেন দর্শনা পরিবারের সদস্যরা। আন্দোলন বেগমান করার জন্য কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। দর্শনাকে উপজেলাকরণের দাবি কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন কেন্দ্রিক নয়, এ দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকাস্থ দর্শনা পরিবারের আয়োজনে গতকাল সোমবার বিকেলে দর্শনা অডিটোরিয়াম কামকমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভা শুরুর আগে আন্দোলনের ধারণকৃত আংশিক ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরপরই শুরু হয় আলোচনাসভা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর বলেন, দর্শনা আমার প্রাণের শহর। এ শহরে কেটেছে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকাল। আমার শরীরে লেগে আছে দর্শনার মাটির গন্ধ। দর্শনার প্রতি আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিলো, আছে ও যতোদিন বেঁচে থাকবো এ ভালোবাসা অক্ষুণœ থাকবে। এ ভালোবাসার টানেই দর্শনার উন্নয়ন আমারও প্রাণের দাবি। ইতোমধ্যেই দর্শনাকে থানায় রুপ দিতে প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। ২-৩ মাসের মধ্যেই দর্শনাকে থানায় ঘোষণা দেয়া হবে। এবার বাকি থাকলো উপজেলা ঘোষণা। দর্শনাকে উপজেলাকরণের ক্ষেত্রে বেশ অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়েছি। আপনাদের আন্দোলন চালিয়ে যান। বিশ্বাসের সাথে বলছি, দর্শনাকে উপজেলা ঘোষণা হতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নে বিশ্বাসী। যে দাবি গণদাবিতে পরিণত, সে দাবি পূরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই আন্তরিক হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দর্শনাকে উপজেলাকরণের জন্য যা যা করার দরকার তা আন্তরিকতার সাথে করেছি ও করবো ইনশাল্লাহ। ঢাকাস্থ দর্শনা পরিবারের সভাপতি কৃষিবিধ হামিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহাসিন আলী, চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অ্যাড. শহিদুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ, শিক্ষাবিধ মোশাররফ হোসেন, সাবেক দর্শনা পৌর মেয়র মহিদুল ইসলাম, জেলা আ.লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম,শাহ এনামুল করিম ইনু, দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, রু—ম আলী, জাহিদুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য মুন্সি সিরাজুল ইসলাম, কবি ও সাহিত্যিক আবু সুফিয়ান। দর্শনাকে উপজেলাকরণ আন্দোলনের মুখপাত্র আনোয়ার হোসেনের উপস্থাপনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ঢাকাস্থ দর্শনা পরিবারের সাধারণ সম্পাদক আ. হামিদ পিন্টু। উপস্থিত ছিলেন, এনামুল হক শাহ মুকুল, সাবু তরফদার, কেরুজ সেলস অফিসার শেখ শাহবুদ্দিন, আলী মুনসুর বাবু, গোলাম ফারুক আরিফ, কেরুজ শ্রমিক নেতা মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, এ্যাড সাজাহান আলী, হারুন অর রশিদ, জাহাঙ্গীর আলম লুলুু, আ. বারী, নজরুল ইসলাম, আ.লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। দর্শনাকে উপজেলাকরণের দাবি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ন্যায্য অধিকার আদায়ের মাঠ ছাড়তে নারাজ আন্দোলনকারিরা। উপজেলা করণ আন্দোলনে এখন সর্বস্থলের মানুষ হয়েছে সোচ্চার। দলমত নির্বিশেষে সকলেই দাঁড়িয়েছে এক কাতারে। এ দাবি এখন দাবিই নয় এ হলো অধিকার। এ অধিকার আদায়ে সবধরনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত এলাকাবাসী। সরকার দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে দর্শনাকে উপজেলা আন্দোলন মঞ্চ থেকে। দেড়শ বছরের পুরাতন শহর দর্শনা ভৌগলিকভাবে সীমানা খুব দীর্ঘ না হলেও ইতিহাস, ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভূখ- গঠিত হওয়ার পূর্ব থেকেই অত্যান্ত সমৃদ্ধ একটি শহর। ১৯৩৮ সালে এশিয়ার মহাদেশের ২য় বৃহত্তর ও দেশের সর্ববৃহত কেরুজ চিনিকল দর্শনায় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভীত আরো মজবুত হয়। দর্শনায় কাস্টমস স্থাপিত হয় ১৯৫৮ সালে। পরপরই ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম বাংলাদেশের ভূখ-ে দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার রেলপথ করা হয় নির্মাণ। সেই থেকে দর্শনা জংশন দেশের বুকে আলাদা একটা মহিমা নিয়ে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। দর্শনায় দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক রেলপথ যার মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের পূর্বে ভারতের সাথে যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় দর্শনা স্টেশন থেকে। বর্তমানে যা দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশন নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় দর্শনার ভূমিকা ইতিহাসের মানচিত্রে আজও সমাদৃত। মুক্তিযুদ্ধের সময় টেলিফোন বা টেলিগ্রাফে দর্শনার কোর্ড (ছদ্ম নাম) ছিল উওঘএঅ। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে পারাপার ও প্রশিক্ষণের ট্রানজিট পয়েন্ট ছিল দর্শনা। তাছাড়া মহান মুক্তিদ্ধুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ গৌরবময় ভূমিকা ছিলো এ শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। সরকারের কোষাগারে রাজস্ব দেয়ার দিক থেকেও দর্শনা অনেক এগিয়ে। কেরুজ চিনিকল, ডিস্টিলারি বিভাগ, রেল স্টেশন, কাস্টমস, ব্যাংক, বীমা, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সরকারি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর সরকার প্রায় ৩শ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। দর্শনার সাংস্কৃতিক পরিচয় আজও দেশব্যাপী সুনাম অর্জন করছে। দর্শনার এক সময়ের প্রশাসনিক পরিচয় ছিলো ইউনিয়ন যা ১৯৯১ সালে পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে দর্শনা পৌরসভা ২য় শ্রেণির মর্যাদাপ্রাপ্ত। রাজনৈতিকভাবেও দর্শনার অবস্থান বেশ মজবুত। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহাসিন আলী, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, জেলা বিএনপির অন্যতম নেতা, বিশিষ্ট শিল্পপতি হাজি ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু, জেলা কমিউনিস্টপার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. শহিদুল ইসলাম, দর্শনা পৌরসভায় তিনবার নির্বাচিত মেয়র মতিয়ার রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু, জাকারিয়া আলমসহ বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের বসবাস দর্শনায়। পারকৃষ্ণপুর-মদনা, কুড়–লগাছি, বেগমপুর, নেহালপুর, গড়াইটুপি ও তিতুদহ ইউনিয়ন নিয়ে দর্শনাকে উপজেলায় উন্নিতকরণের ক্ষেত্রে সকলের রয়েছে আন্তরিক মনোভাব।