বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার: আজ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সরকারের নানামুখি চাপ, সাংগঠনিক দুর্বলতার টানাপড়েনে প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরে কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে দলটি। দীর্ঘ ১১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় জর্জরিত। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর ঝুলছে সাজার খড়গ। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা শুরুতে হোঁচট খেলেও এখন তা কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দলটি। নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী প্রার্থী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হচ্ছেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারীদের একমঞ্চে নিয়ে ‘জাতীয়তাবাদী দল’ (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। দলের ৩৯ বছরের ইতিহাসে ৩৫ বছর ধরে একটানা সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। চার বার ক্ষমতায় ও দুইবার বিরোধী দলে থাকা এই দলটি বিভিন্ন সময় নানা বাধাবিপত্তির মুখেও পড়েছে। তবে সংগঠন থেমে থাকেনি, বেড়েছে জনসমর্থনও। সরকারের দমন-পীড়নে নেতাকর্মীদের ওপর মামলার হিড়িক ও গ্রেফতার, নিখোঁজ বা গুম ঘটনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াতে লড়াই করে যাচ্ছে দলটি।

গত বছর ১৯ মার্চে জাতীয় কাউন্সিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি। যদিও কাউন্সিলের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি তারা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ সময়ে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করায় আজ সকাল ১০টায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলানগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ অপর্ণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণীতে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

রমনার বটমূলে গোড়াপত্তন বিএনপির: ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত রমনা বটমূলেই গোড়াপত্তন হয়েছিলো বিএনপির। বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৭৭ সালের জুন মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়া ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগো) দল গঠন করেন। ওই দলের আহ্বায়ক হয়েছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। এরপর জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করে ওই বছর প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জিয়া। জাগো দল, ন্যাপ (মশিউর রহমান যাদু মিয়া), ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম-আকরর হোসেন), লেবার পার্টি (মতিন) ও মুসলিম লীগ (শাহ আজিজুর রহমান) নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় যাতে বিচারপতি আবদুস সাত্তার, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, শাহ আজিজুর রহমান, অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এসএ বারী এটি, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম, জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদ-উল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) নুরুল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত, এম সাইফুর রহমান, মওলানা আবদুল মতিন, কর্নেল (অব.) আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, আতাউদ্দিন খান প্রমুখ নেতারা ছিলেন।

১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়। দলের ১১ সদস্যের স্থায়ী কমিটির গঠন করা হয়। মনোনয়ন দেয়া হয় দলের মহাসচিব হিসেবে অধ্যাপক বি. চৌধুরীকে। এর আগে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের পটভূমিতে ৭ নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। রাষ্ট্রপতি হয়ে প্রথমে তিনি নিজের ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন যা পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে আত্মর্প্রকাশ ঘটে। বিএনপি বিভিন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকারের শাসনামল থেকে একটানা ১১ বছর দলটি ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। ২০১৪ সালের দশম নির্বাচন বর্জনের আন্দোলন এবং পরের বছর ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে দলটি সরকারের চরম দমন-নির্যাতনের মুখে পড়ে। বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হন প্রায় ২৫ হাজারে অধিক নেতাকর্মী। ফলে দলটির সাংগঠনিক শক্তিতে আঘাত পড়ে।